হাইকোর্টের নির্দেশনা লঙ্ঘনের আশংকা ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুসারে লালবাগ কেল্লা সংরক্ষণের দাবি
বিগত দিনে লালবাগ কেল্লা সংরক্ষণে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনার যথার্থ বাস্তবায়ন না হওয়ার প্রেক্ষিতে এবারও আদালতের নির্দেশনা সুকৌশলে অমান্য করার আংশঙ্কা করছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। লালবাগ রক্ষায় ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুসারে লালবাগ কেল্লা সংরক্ষণের দাবি জানানো হয়। গত 29 জুন 2015 দুপুর ১২ টায় পবা কার্যালয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি), ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, নাস, প্রত্যাশা, পীস, ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম স্টুডেন্টস কনফেডারেশন, স্বচ্ছ ফাউন্ডেশন, অরুণোদয়ের তরুণ দল, অনির্বাণ সমাজ কল্যাণ সংস্থা, মান্তুল ফাউন্ডেশন, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটি, আইনের পাঠশালা, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি, পরিবর্তন চাই, বারসিকসহ মোট ১৭টি সংগঠন সম্মিলিতভাবে এ দাবি জানানো হয়।
বক্তারা বলেন, ঐতিহ্যবাহী মুঘল কীর্তি লালবাগ কেল্লার মহিমা বিনষ্ট করে প্রাচীর ভেঙ্গে কেল্লার ভিতরে পার্কিং অবকাঠামো নির্মাণ করা জাতির জন্য লজ্জাজনক। যা বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৪, পুরাকীর্তি আইন, ১৯৬৮, ঢাকা ইমারত নিমার্ণ বিধিমালা, ২০০৮ এবং হাইকোর্টের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পুরাকীর্তি বিনষ্টের প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তা কর্র্তৃক এ ধরনের কার্যক্রমের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৪ এ বিশেষ শৈল্পিক কিংবা ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎর্যমন্ডিত স্মৃতিনিদর্শন, বস্তু বা স্থানসমূহকে বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ হতে রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। লালবাগ কেল্লার এই ধ্বংশত্মক কার্যক্রম সংবিধানের সুপষ্ট লঙ্ঘন। তারা বলেন, প্রতœতত্ত্ব বিভাগের দায়িত্ব ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষন করা। কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতœতত্ত্ব অর্থের অভাবে সংরক্ষনের উদ্যোগ গ্রহণ না করা হলেও, রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করে পার্কিং তৈরি করা হচ্ছে।
বক্তারা বলেন, কতিপয় ব্যক্তির সুবিধার জন্য লালবাগ কেল্লায় প্রাইভেট গাড়ীর পাকিং নির্মানের প্রেক্ষিতে ঘনবসতি পূর্ণ এলাকায় যানজট, দূষণ এবং দূঘর্টনা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদেশী পর্যটকদের গাড়ি পার্কিংয়ের কথা বলে কর্তৃপক্ষ একটি বিশেষ গোষ্ঠীর ব্যবসায়ী স্বার্থ রক্ষা করা হচ্ছে। লালবাগ কেল্লায় দর্শনার্থীদের আসার সুবিধার্থে গণপরিবহন ব্যবস্থার সাথে সংযোগ স্থাপন করে হাঁটার জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। বিশ্বের অন্যান্য প্রতœতাত্ত্বিক নির্দশন দেখতে দেশী-বিদেশী পর্যটকেরা তারা দূর পথও পায়ে হেঁটে যাওয়ার মানসিকতা রাখেন।
সভায় লালবাগ কেল্লা রক্ষায় প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাথে স্বাক্ষাৎ করে সুপারিশ প্রদান; কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নাগরিক সমাবেশ আয়োজন; লালবাগ কেল্লা রক্ষায় জনমত সৃষ্টিতে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে মতবিনিময়; গণ স্বাক্ষর গ্রহণ কর্মসূচি পালন; চিঠি ক্যাম্পইন ও সামাজিক গণমাধ্যমে ক্যাম্পেইনসহ নানা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করা হয়।
সভায় বিদ্যমান আইন ও হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে পার্কিং অবকাঠামো নির্মানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নকারীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও প্রচলিত আইনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ; লালবাগ কেল্লার মূল নকশা উপেক্ষা করে পার্কিং অবকাঠামো নির্মাণের মত ধ্বংসাত্বক কার্যক্রম বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন; হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে পার্কিং অবকাঠামোর নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করে পূর্বে অবস্থায় নিয়ে আসা অর্থাৎ বাগান তৈরি; লালবাগ কেল্লাকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানে ইউনেস্কোর সুপারিশ অনুসারে সঠিকভাবে কোর জোন নির্ধারণ, বাফার জোন তৈরি এবং চারদিকে দেয়ালের বাইরে ৫ মিটার প্রশস্ত হাঁটার পথ নির্মাণ; লালবাগ এলাকায় দর্শণার্থীদের আসার সুবিধার্থে উন্নত গণপরিবহন ব্যবস্থা সংযোগ স্থাপন করে হাঁটার জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি;। গণপরিবহন স্টপেজ থেকে দর্শনার্থীদের আনার জন্য গাইড দ্বারা বিদেশী পর্যটকদের অর্ভ্যথনা জানানো; উক্ত এলাকায় ছুটির দিনের প্রাইভেট গাড়ীসহ অন্যান্য ভারী যানবাহন প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ; মালবাহী পরিবহন ভোর হবার আগে এবং সন্ধ্যার পরে প্রবেশের বিধান চালু; লালবাগ কেল্লাসহ অন্যান্য পুরাকীর্তি ও প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সকলের অংশগ্রহণে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়।
সভায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পবার ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির সদস্য সচিব স্থপতি সাজ্জেদুর রশিদ। বক্তব্য রাখেন পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, ২৪ নং ওয়ার্ড মহিলা কমিশনার আলেয়া পারভীন রনজু, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের ন্যাশনাল এডভোকেসী অফিসার মো: মারুফ হোসেন, এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, আইনের পাঠশালার সভাপতি সুব্রত দাস খোকন, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি বুরহান উদ্দিন আহমেদ, মো: নজরুল ইসলাম, ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম স্টুডেন্টস কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট আশিকুর রহমান অভি প্রমুখ।