জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর গৃহস্থালী কাজের অবদান স্বীকৃতি দেয়া হলে নারী সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে এবং নারী নির্যাতন কমে আসবে। গত 29 আগস্ট 2015 সকাল ১১টায় চারুকলা ইন্সটিটিউট এর সামনে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট আয়োজিত এক অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা দাবী করেন। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারীর সভাপত্বিতে কর্মসূচিতে সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট-এর সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান।
গাউস পিয়ারী বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীরা নানা রকম বৈষম্যের শিকার। বৈষম্যের কারণে নারীরা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অথচ সমাজ, রাষ্ট্র ও সভ্যতার উন্নয়নে নারীর অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু নারীর এই অবদান যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। শিশুর যতœ, রোগির সেবা, ঘরের যাবতীয় কাজের দায়িত্ব পালনসহ প্রতি নিয়ত তারা অনেক দায়িত্বশীল ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে যাচ্ছে। নারীদের গৃহস্থালীর এসব কাজকে অদৃশ্য শ্রম হিসাবে বিবেচনা করায় তাদের এই অবদানকে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। কিন্তু তাদের এসব মুজুরীবিহীন কাজ পরিবারে, সমাজে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
নাজনীন কবীর ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট বলেন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের একটি গবেষণায় দেখা যায়, ৮১% নারী সরাসরি গৃহস্থালী কাজে নিয়োজিত থাকে অন্যদিকে পুরুষ মাত্র ১.৩%। যেখানে ১৯% নারী চাকুরীর সাথে যুক্ত সেখানে ৯৮.৭% পুরুষ কোন না কোন নিয়মিত বা অনিয়মিত চাকুরীতে নিয়োজিত আছে। রান্না করা, বাসন মাজা এবং বাচ্চাদের যতœ নেয়া প্রভৃতি কাজের কোন সঠিক হিসাব করা সম্ভব নয়। একজন নারীর গৃহের প্রতি দায়িত্ব ও ভালবাসা মূল্য অনেক, যা টাকার অংকে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নারীদের পারিশ্রমিকবিহীন কাজের যদি আর্থিক মূল্য বিচার করা হয় তবে দেখা যাবে তা জিডিপি’র চেয়ে বেশি হবে।
বক্তারা আরো বলেন, গৃহস্থালী কাজের নারীর অবদানকে জাতীয় অর্থনীতিতে সম্পক্তকরণের লক্ষে সুপারিশসহ গৃহস্থালী কাজের নারীর অবদান এর গুরুত্ব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা । গৃহস্থালী কাজে নারীর অবদানকে জাতীয় অর্থনীতিতে স্বীকৃতি দেয়া। নারীর অমূল্যায়িত বা গৃহস্থালী কাজের সঠিকমূল্য জিডিপি হিসাবে যুক্ত করার জন্য নীতি নির্ধারণীপর্যায়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ এর বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ। জাতীয় অর্থনীতিতে নারীদের অবদানের কথা ও পরিসংখ্যান সকল প্রকার দলিলে উল্লেখ করতে হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরে্যা কর্তৃক প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নারী শ্রমের জরিপ করতে হবে। বক্তারা আশা প্রকাশ করে বলেন, এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারলে সামগ্রিকভাবে নারীর প্রতি বৈষম্যের হার কমে আসবে।
কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন রোকসানা বেগম সেন্টার ম্যানেজার অপরাজেয় বাংলাদেশ, ফারহানা জামান লিজা রিসার্চ এ্যাসিসটেন্ট টোব্যাকো কোন্ট্রল রিসার্চ সেল, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি, বরাত হোসেন অরুণোদয়ের তরুন দল, তাজুল্লি শিফা বর্ণ নারী অধিকারকর্মী, ইন্সটিটিউট অব ওয়েল বিইং এর আ ন ম মাসুম বিল্লাহ, তানজিলা হক ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর এ্যাসিসটেন্ট এডভোকেসি অফিসার।