২৫ জুন বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের নেতৃত্বে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), প্রত্যাশা, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটি, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের একটি দল পরিদর্শন করে ৩০০ বছরের প্রাচীর ভেঙ্গে কেল্লার ভিতরে পার্কিং অবকাঠামো নির্মাণে উদ্বেগ প্রকাশ করে। পরিদর্শন দলের কাছে এই সুস্পষ্ট যে কেল্লার উন্নয়নের নামে যা করা হচ্ছে তা লালবাগ কেল্লার মূল নকশার পরিপন্থি। অবিলম্বে কেল্লার দেওয়াল ভেঙ্গে বাগান বিনষ্ট করে গাড়ি পার্কিং তৈরি বন্ধ করতে হবে। যারা এই অপকর্মের সাথে জড়িত তাদের সকলকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
কেল্লা পরিদর্শন করে দেখা গেছে খোদ প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর পুরাকীর্তি বিনষ্টের দায়িত্ব নিয়েছে। তারা ঐতিহাসিক লালবাগ কেল্লার সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ফেলছে। মোগল আমলের এই দুর্গ যেখানে নানা ভাবে অরক্ষিত সেখানে ভিআইপিদের কার পার্কিংয়ের ‘ব্যবস্থা’ করা হচ্ছে উন্নয়ন আর সংরক্ষনের নামে। কর্তৃপক্ষ গাড়ি পার্কিংয়ের নামে একটি নিদিষ্ট গোষ্ঠীর ব্যবসায়ী স্বার্থরক্ষায় ব্যস্ত হয়ে ওঠেছে।
আমরা পরিবেশবাদীরা মনে করি, কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এ দেশের তথা পুরানো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মোগল স্থাপনাটি নিয়ে নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। কেল্লার ভেতরে গড়ে তোলা হচ্ছে বেমানান এই কার পার্কিং। সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক উদ্দেশে প্রভাবশালী মহলের প্ররোচনায় গাড়ি পার্কিং গড়ে তোলার কাজ চলছে। অথচ যে স্থানটিতে গাড়ি পার্কিং হচ্ছে, সেখানে মোগল আমল থেকেই মসজিদের পাশে ওই জায়গায় শুক্রবার পবিত্র জুমার নামায, রমযানে তারাবী, ঈদগুলোতে ঈদের জামাত করা হতো, যা পুরান ঢাকারই ঐতিহ্য। সারা দুনিয়াতে যেখানে প্রতœতত্ত্ব সম্পদ সংরক্ষনে মূল নকশাকেই সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হয়, সেখানে লালবাগের কেল্লার মত মূল্যবান প্রতœতত্ত্ব সম্পদের বিনষ্ট করে গাড়ি পার্কিং গড়ে তোলা হয়েছে। এই পার্কিং তৈরির ফলে কেল্লার মূল নকশার পরিবর্তন ঘটবে। যা ১৯৬৮ পুরাকীর্তি আইনের পরিপন্থি।
পরিদর্শন দল কেল্লার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলার নজির পান। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে প্রাপ্ত বেতন ভাতা কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের আচরণ এবং কথাবার্তায় তারা যেন ঠিকাদারের স্বার্থরক্ষায় ভূমিকা নিয়েছে। ঠিকাদার ও কেল্লার কাস্টডিয়ান মৌখিকভাবে গাড়ি পার্কিং তৈরির জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটির অনুমোদন আছে জানালেও তা দেখাতে পারেন নি। পরিদর্শন দলকে লালবাগ কেল্লার কাস্টডিয়ান জানান যে, এই পার্কিংটি তৈরি করা হচ্ছে বিশেষ কমিটির সুপারিশে অস্থায়ী ভাবে। তিনি তার যুক্তির পক্ষে কোন প্রকার বৈধ কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। দেশের ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থে অবিলম্বে এই কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হোক। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যারা পরিকল্পিতভাবে লালবাগ কেল্লা বিনষ্টের সাথে জড়িত তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে বলে পরিদর্শন থেকে দাবী জানানো হয়।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের নেতৃত্বে পরিদর্শন দলে অংশগ্রহন করেন প্রত্যাশার সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটির মহাসচিব আমির হোসেন, আন্তর্জাতিক সংগঠন দি ইউনিয়ন’র টেকনিক্যাল এডভাইজার এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ হোসেন, সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা নাজনীন কবীর, সমাজসেবক এ কে এম সিরাজুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, মোঃ সেলিম প্রমূখ।