নেতিবাচক খাদ্যাভ্যাস, অলসতা, ধূমপান ও তামাক সেবন, মাদকের অপব্যবহার ইত্যাদি নানা কারণে মানুষের মধ্যে ক্যান্সার, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, স্ট্রোক, হাঁপানিসহ নানারকম অসংক্রামক রোগ বাড়ছে। এসব রোগ প্রাণঘাতী, দীর্ঘমেয়াদী ও চিকিৎসা ব্যয়বহুল। তাই অসংক্রাতক রোগ প্রতিরোধকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রমে জোরদার করার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্যের টেকসই উন্নয়ন করা সম্ভব।
১৬জুন বিকাল সাড়ে চারটায় রায়েরবাজার ডাবিউবিবি ট্রাস্ট এইচআরডিসি সেন্টারে আয়োজিত বিভাগীয় কর্মশালায় বক্তারা উপরোক্ত আহবান করেন। কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক অধ্যাপক ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিশিষ্ট পরিবেশবিদ ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল এর প্রাক্তন সমন্বয়কারী আমিন উল আহসান, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ এর পরিচালক গাউস পিয়ারী প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের মুখপত্র সমস্বর এর নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন।
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, মানুষ সুস্থ্য থাকতে ব্যক্তিগত ইচ্ছাশক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, ধূমপান ও তামাকসহ সব ধরনের নেশা বর্জনের মাধ্যমে রোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনা ও সুস্থ্য থাকা সম্ভব। তবে সবার জন্য স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় আইন ও নীতির প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
পরিবেশবিদ আবু নাসের খান বলেন, পরিবেশদূষণ জনস্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে। তাই পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে সব মানুষকে সক্রিয় হতে হবে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির নামে বেপরোয়া শিল্পায়ন ও নগরায়ন এবং কতিপয় মানুষের লোভী মানসিকতা পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। উন্নয়ন আমাদের দরকার, কিন্তু সে উন্নয়ন যেন পরিবেশবান্ধব হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
সকালে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন সাবেক আইজিপি ও আইন কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ড. এনামুল হক, পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা)-র নির্বাহী স্ধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আব্দুস সোবহান, দি ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট-এর সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ।
ড. এনামুল হক বলেন, উন্নয়নের স্বার্থেই মানুষকে সুস্থ্য রাখতে হবে। এজন্য সুস্থ্য থাকার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। যেসব অসংক্রাম রোগ যেমন: হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়বেটিস, ক্যান্সারে মানুষের মৃত্যু বেশি ঘটছে, সেগুলো প্রতিরোধ করতে হবে। এসব রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হলে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক উন্নতি সম্ভব হবে।
প্রকৌশলী মো. আব্দুস সোবহান বলেন, খাদ্যে ভেজাল ও রাসায়নিক ব্যবহার, কৃষিতে অত্যাধিকার রাসায়নিক ব্যবহারও অসংক্রামক রোগের জন্য দায়ী। নগর যাতায়াত, বাসস্থান এবং অন্যান্য অবকাঠামোর সমস্যার কারণে মানুষের মাঝে অতিরিক্ত মোটা হওয়া, বিনোদনের অভাব, অতিরিক্ত মানসিক চাপসহ নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে। পরিবেশ দূষণরোধ ও জীবনযাত্রার কিছুটা পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা অনেকাংশে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে পারি।
এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক মানুষকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে। তামাকের কারনে বিভিন্ন রকম ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়বেটিস, এজমাসহ নানাবিধ মৃত্যুঘাতী রোগ সৃষ্টি হয়। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে মৃত্যুঘাতি তামাকজাত দ্রব্যের উপর ১% স্বাস্থ্য কর (সারচার্জ) আরোপ করেছে। তামাকজাত দ্রব্যের উপর স্বাস্থ্য কর হিসেবে আদায়কৃত অর্থের যৌক্তিক ও পরিকল্পিত ব্যয় নিশ্চত করতে ‘হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন’ গঠন করা দরকার।
সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ সরকার মধ্য আয়ের দেশ হতে যাচ্ছে। মধ্য আয়ের দেশ হতে গেলে মানুষের কর্মক্ষমতা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য অবশ্যই মানুষকে সুস্থ্য রাখতে হবে। সুস্থ্য থাকার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ অসুস্থ্য হয় এমন সব খাদ্যদ্রব্যের প্রচারণা নিষিদ্ধ করতে হবে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে কিভাবে পরিবেশবান্ধব যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়, সেদিকে মনোনিবেশ করতে হবে।
দিনব্যাপী কর্মশালার বিভিন্ন অধিবেশনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও আইন বাস্তবায়নে করণীয় এবং অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে মাল্টিমিডিয়ার সাহায্যে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার কর্মকর্তা সৈয়দা অনন্যা রহমান, শারমিন আক্তার রিনি ও আতিকুর রহমান। কর্মশালায় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ৩০টি বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।