৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস। প্রতি বছর এ দিবসের একটি প্রতিপাদ্য থাকে। ২০১৫ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় হল “শত কোটি জনের অপার স্বপ্ন, একটি বিশ্ব, করি না নিঃস্ব”। পৃথিবীর কোন সম্পদ অফুরন্ত নয়। কাজেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা না ভেবে সম্পদের অপরিকল্পিত ব্যবহার ঠিক নয়। সুন্দরবন শুধুমাত্র আমাদের দেশের নয়, সারাবিশ্বের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ। এটি একদিকে যেমন আমাদের দেশের একটি ঐতিহ্য তেমনি সুন্দরবন আমাদের দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করছে। কিন্তু সুন্দরবনের সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার এবং নানাবিধ উন্নয়ন প্রকল্পের নামে সুন্দরবনকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। সুন্দরবন এলাকায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা অপূরণীয় ক্ষতি হবে। এর ফলে এখানকার গাছপালা, প্রাণীকূল, প্রাকৃতিক ভারসাম্য কোন কিছুই এ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে না। তাই সকলের সুন্দরবনকে অন্যত্র বিদ্যূৎ কেন্দ্র স্থাপন করা উচিৎ। আসন্ন বিশ্ব পরিবেশ দিবসকে সামনে রেখে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট গত ২৬ মে, ২০১৫ সকাল ১১ টায় ঢাকার রায়েরবাজারে ডাব্লিউবিবি ট্রাষ্ট এর কৈবর্ত মিলনায়তনে “সুন্দরবন ঃ উন্নয়ন এবং পরিবেশ” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা একথা বলেন।
গাউস পিয়ারী মুক্তি, পরিচালক (প্রশাসন), ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ তার ট্রাস্ট উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, আমাদের সম্পদ সীমিত। তাই আমাদের সম্পদ ব্যবহারেও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমাদের মনে রাখতে হবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনের জন্য আমরা পরিবেশকে ধ্বংসের দিকে ঢেলে দিতে পারি না। আমাদের দেশে প্রচুর পরিমাণে অপ্রয়োজনীয়ভাবে বিদ্যুৎ খরচ হয়। এ বিশ্ব কেবল আমাদের নয়। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মেরও। আমাদের এমনভাবে সম্পদ ব্যবহার করতে হবে যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা একটি সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে পারি। তিনি আরো বলেন সুন্দরবন শুধুমাত্র আমাদের দেশের সম্পদ নয়, এটি বিশ্বের সকলের জন্য সম্পদ। তাই এ বনকে রক্ষায় আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
সভার মূখ্য আলোচক বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারন সম্পাদক, ড. আবদুল মতিন বলেন, আমরা চাইলে সুন্দর বনের মত নতুন আরও একটি বন তৈরি করতে পারবো না। সুন্দরবনের একটি নিজস্বতা রয়েছে। সুন্দরবনে বিশেষ প্রজাতির মৌমাছি এবং প্রজাপতি রয়েছে যা সুন্দরীসহ অন্যান্য গাছের পরাগায়নে সহায়তা করে। এসকল গাছ বনের প্রাণীদের ওষধি হিসেবে কাজ করে। রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফলে যদি এ সকল মৌমাছি এবং প্রজাপতি মারা যায় তবে পুরো প্রক্রিয়াটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া বনের ভিতর অনেক জায়গা অবৈধভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে যা আমাদের জন্য একটি সতর্কবাণী। অর্থাৎ আমাদের সুন্দরবন রক্ষায় আমাদের সকলকে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। সাধারণ জনগণকে এ সকল উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত করা, তাদের সচেতন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ তারা যেহেতু সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের এক্ষেত্রে সম্পৃক্ত করলে সুফল পাওয়া যাবে। সুন্দরবন রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের আরো আন্তরিক হওয়া প্রয়োজন বলে তিনি জানান|
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ হোসেন এর সঞ্চলনায় আলোচনা সভায় আলোচনা করেন ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার সৈয়দা অনন্যা রহমান, সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা নাজনীন কবীর, প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান লিটু, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর সম্পাদক মঞ্জুর হাসান দিলু এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর কর্মকর্তাবৃন্দ।