English | Bangla
রেলকে স্বনির্ভর করতে রেলের ভাড়া বৃদ্ধি নয় পণ্য পরিবহন ও সুষ্ঠু সম্পদ ব্যবস্থাপনার আহ্বান
বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি রাষ্ট্রীয় সেবা প্রতিষ্ঠান। রেল পরিচালনার ক্ষেত্রে যে ব্যয় হচ্ছে তা পূরণ করে এটিকে একটি স্বনর্ভির প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা যেমন জরুরি, ঠিক তেমনি পরিবেশ দূষণরোধ, যাতায়াত নিরাপত্তা, স্বল্প খরচে মালামাল পরিবহন, ভূমির পরিমিত ব্যবহার, নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক পরিবহন, যানজট নিয়ন্ত্রণ, বিকেন্দ্রীকরণসহ সর্বপরি নগরের সঙ্গে গ্রামের যোগাযোগের সেতুবন্ধনে রেলের যে গুরুত্ব তাও বিবেচনা করা প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শুধু অর্থকে রেলের লাভক্ষতির মানদন্ড হিসেবে বিবেচনা না করে রেল জনগণকে কি পরিমান সেবা প্রদান করতে পারছে তাই রেলের লাভক্ষতির মানদন্ড হওয়া উচত। রেল একটি সেবামূলক নিরাপদ ও গণ পরিবহন মাধ্যম হলেও যাত্রী সেবারমান বৃদ্ধি না করে ভাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে রেলকে যাত্রীবিমুখী করার একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার প্রচেষ্টা বন্ধ করতে হবে। রেল ভাড়া বৃদ্ধি না করে ভূ-সম্পত্তিসহ সকল সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পণ্য পরিবহনে মনোযোগী হতে হবে। গত ০৮ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ১১.০০ টায় পবা কার্যালয়ে পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (পবা) ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়। 
 
সংবাদ সম্মেলনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাষ্ট এর সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ আতিকুর রহমান এবং সঞ্চালনা করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাষ্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে আবু নাসের খান, চেয়ারম্যান, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সাবেক রাজনীতিবীদ, প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান, সাবেক অতিরিক্ত পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর এবং সেক্রেটারি, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), তোফায়েল আহমেদ, সম্পাদক, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নাজনীন কবির, সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাষ্ট, আবুল হাসনাত, মর্ডাণ ক্লাব, মনজুর হাসান দিলু, সম্পাদক, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), পদ্মাবতী দেবী, আইন ও সালিশ কেন্দ্র প্রমুখ।
 
প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বলেন, বাংলদেশ রেলওয়ের বর্তমানে যে সুযোগ সুবিধাগুলো আছে এবং সম্পদ রয়েছে সেগুলোকে আমরা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছি না রেলের রেললাইনের যে সক্ষমতা আছে সুষ্ঠু পরিকল্পনার আভাবে আমরা মাত্র ৭৫% ব্যবহার করতে পারছি। ফলে রেলে গতি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। রেল ভাড়া বৃদিধ না করে বরং রেলের জায়গা রেলের অধীনে রেখে উৎপাদন/আয় বর্ধনমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা এবং বিভিন্ন সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে  লিজ বাবদ রেলের পাওনা টাকা উদ্ধারের মাধ্যমে রেলের আয় বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
 
পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, রেল একটি পরিবেশ বান্ধব, অর্থ সাশ্রয়ী গণপরিবহন। রেলেকে ব্যবহারকে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন বাড়ানো সম্ভব হলে উন্নয়নের সম্ভবনা বাড়বে। স্টেশনগুলোর আশেপাশের জায়গা রেলের উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত করে উৎপাদন/আয় বর্ধনমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। যেমন: আবাসিক হোটেল, মার্কেট নির্মাণ। পাশপাশি রেলওয়ে সাথে সমগ্র দেশের বন্দর ও শিল্প কারখানাগুলো সংযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যাতে সহজে ও কম খরচে মালামাল পরিবহন করতে পারে তার ব্যবস্থা করা। পূর্বে রেলওয়ে যে সকল জমি লীজ দিয়েছিল সেগুলোর ফি বাড়িয়ে আয় বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
 
মারুফ হোসেন বলেন, রেলের ভূসম্পত্তিসহ সম্পদের সুষ্ঠ ব্যবহার এবং পণ্য পরিবহনে মনোযেগী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিকট রেলের পাওনা টাকা উদ্ধার করা গেলে রেলকে স্বয়ং সম্পন্ন করা সম্ভব। বিগত দিনগুলোতে রেলের যে জায়গাগুলো ইজারা দেওয়া হয়েছে তার পরিমাণ ও আয় সঠিকভাবে নিরূপণ করে সেগুলো আদায় করা এবং রেলের দখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তি উদ্ধারে আইনী সমস্যা মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক এডভোকেট নিয়োগ করে আয়বর্ধন মূলক কাজে পরিচালনার মাধ্যমে রেলের আয় বৃদ্ধি করতে হবে। পাশপাশিস্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পৃক্ত করে লিজের মাধ্যমে রেললাইনের দুপাশে ফলগাছ রোপণ করা যেতে পারে। শর্তসাপেক্ষে এটির বাস্তবায়ন করলে রেলওয়ে এবং স্থানীয় জনগণ উভয়ই আর্থিকভাবে উপকৃত হবে।
 
তোফায়েল আহমেদ, সম্পাদক, রেল কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়। পৃথিবীর অনেক দেশে রেল সেবা মাধ্যম হিসেবে ভর্তুকি দিয়ে পরিচালিত হয়। বিশ্বের প্রায় ২৩ টি দেশ আমাদের চেয়ে কম ভাড়া নিয়ে রেলকে স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে এবং ৫৩ টি দেশ আমাদের চেয়ে কম ভাড়া নিয়ে ভর্তুকি দিয়ে রেল পরিচানা করছে। রেলের আয় বৃদ্ধিতে পোশাক শিল্প খাতের পণ্য, বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পণ্য এবং কৃষিপণ্য রেলের মাধ্যমে পরিবহনে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রেলে মালামাল পরিবহনে ব্যবসায়ীদের উৎসাহী করতে প্রমোশনাল কার্যক্রম গ্রহণ করর পাশপাশি সবজি বা সহজে পচনশীল পন্য সংরক্ষন বা প্রাণী পরিবহনের জন্য মালবাহী ট্রেনের অবকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে।
 
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতি আবু নাসের খান বলেন, আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ম্যম আয়ের দেশ হবে। তখন মানুষ এবং পণ্য পরিবহনে যে পরিমান ট্রাফিক ভলিয়ম বাড়বে তাকে সামাল দেওয়ার মত ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। এ ক্ষেত্রে রেল কেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থাই একমাত্র সমাধান। দেশের বিভিন্ন স্থানে আইসিডি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, ট্রান্স-এশিয়ান রেলরুটে পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা করা, স্টেশনগুলোতে মালবাহী গাড়ি লোড এবং আনলোড করার জন্য জায়গার ব্যবস্থা করা এবং সর্বপরি মালামাল লোডিং-আনলোডিং এর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মান এর মাধ্যমে রেলের আয় বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নিতে হবে।