তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের ওপর আরোপিত স্বাস্থ্য কর থেকে প্রাপ্ত অর্থের কার্যকর ব্যয় ব্যবস্থাপনা ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠনের দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।
শনিবার ২ মে বিকাল সাড়ে ৪টায় পবা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভা থেকে এ দাবি উঠে আসে।
সভায় জানানো হয়, সরকার গত অর্থবছরের বাজেটে সব রকম তামাকজাত দ্রব্যের ওপর ১ ভাগ স্বাস্থ্য কর আরোপ করে। এ থেকে যে অর্থ আসবে তার পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এ অর্থের কার্যকর ব্যয় ব্যবস্থাপনা ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন গঠন জরুরি।
অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাক্তন পরামর্শক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশে স্বাস্থ্য বাজেট খুবই কম। জনপ্রতি মাসে ২০ টাকা মাত্র। কিন্তু চলমান ব্যবস্থায় তারও সুফল দরিদ্র মানুষ পায় না। অধিকাংশ মানুষই স্বাস্থ্য সেবার সুফল থেকে বঞ্চিত।’
একটি পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন রোগের ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৪৫ লাখ মানুষ স্বল্পমেয়াদী, দীর্ঘমেয়াদী ও চিরস্থায়ী দরিদ্রতার শিকার হন। এছাড়া সরকারেরও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়। তাই জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সরকার কর্তৃক আরোপিত স্বাস্থ্য কর জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে কার্যকর ব্যয় জরুরি।’
পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও পবার নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুস সোবহান বলেন, ‘সরকার ক্ষতিকর পণ্যের ওপর আলাদাভাবে স্বাস্থ্যকর আরোপ করেছে, এটা ইতিবাচক। এখন স্বাস্থ্যকর হিসেবে সংগৃহিত অর্থ যেন সঠিকভাবে ব্যয় হয়, সেজন্য একটা ফাউন্ডেশন গঠন জরুরি হলেও করছে না। সরকারেরই অন্যান্য ফাউন্ডেশনের আদলে এ ফাউন্ডেশন গঠন হতে পারে। এরকম একটি ফাউন্ডেশন হলে সরকার স্বাস্থ্যকর হিসাবে আরোপিত অর্থ কার্যকরভাবে রোগ প্রতিরোধে ব্যয় করতে পারবে।’
পবা স্বাস্থ্য বিভাগের সংগঠক ডা. খালেদ শওকত আলী বলেন, ‘রোগের চিকিৎসার চাইতে রোগ প্রতিরোধকে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। সেক্ষেত্রে প্রস্তাবিত হেলথ ফাউন্ডেশন রোগ প্রতিরোধে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে পারে।’
বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের মুখপত্র সমস্বরের নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে পৃথিবীর অনেক দেশেই সরকারি উদ্যোগে ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এসব ফাউন্ডেশনে স্বাস্থ্য কর হিসেবে সংগৃহিত অর্থ আসে এবং ফাউন্ডেশন এসব অর্থ জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি ও গবেষণা পরিচালনা করার মাধ্যমে রাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করছে।’
মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য দেন- আয়ুনসের সভাপতি ডা. সমীর কুমার সাহা, পবা নির্বাহী কমিটির সদস্য মনজুর হাসান, সেভ দ্য কোস্টাল পিপলের (স্কোপ) নির্বাহী পরিচালক কাজী এনায়েত হোসেন, আমিনুল ইসলাম সুজন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের ন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি অফিসার সৈয়দা অনন্যা রহমান ও জ্যেষ্ঠ প্রকল্প কর্মকর্তা নাজনীন কবির প্রমুখ।
লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিষয়ক প্রতিষ্ঠান দ্য ইউনিয়নের পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম।