জনস্বাস্থ্য, সামাজিকতা, পরিবেশ, অর্থনীতি বিবেচনায় গণপরিসর ও উন্মূক্ত স্থানের গুরুত্ব অপরিসীম। ঢাকা মহানগরীতে এই সুবিধা সংকুচিত হওয়ায় ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার ও মুটিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিসহ মানসিক চাপ বাড়ছে। সুস্থ পরিবেশে সামাজিকতা ও ব্যায়ামের সুবন্দোবস্ত করা হলে ঢাকা শহর হয়ে উঠতে পারে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বসবাসের জন্য একটি উপযুক্ত স্থান। গণপরিসর ও উন্মূক্তস্থান বৃদ্ধিতে খাস অথবা ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করা যেতে পারে। গত 30 মার্চ 2015 সকাল ১১টায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং ওয়ার্ক ফর এর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র যৌথ উদ্যোগে গণপরিসর ও উন্মুক্তস্থান সংক্রান্ত প্রস্তাবসমূহ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞগণ এ অভিমত ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র সহ-সভাপতি স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন এর সভাপতিত্বে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর ন্যশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ হোসেন এর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান লিটু। নির্ধারিত আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাপা’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক এ এম মোয়াজ্জেম হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্স’র সভাপতি অধ্যাপক ড. গোলাম রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক ড. অধ্যাপক আকতার মাহমুদ। আরো বক্তব্য রাখেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক উপদেষ্টা এম মুজাহারুল হক, পিএনপিএস এর সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব, বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি সালমা এ শফি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহিদুল হক খান, অধ্যাপক নুসরাত সুলতানা, সমাজকর্মী একেএম সিরাজুল ইসলাম, পরিবর্তন চাই এর চেয়ারম্যান ফিদা হক, অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, এনডিএফ এর চেয়ারম্যান ইবনুল সাইদ রানা, পরিবেশকর্মী ইশতিয়াক আহমেদ, সমাজকর্মী ফারজানা হক, মাস্তুল ফাউন্ডেশনের মনির হোসেন নিশাত প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, গণপরিসর হলো এমন স্থানসমূহ যা কোন আর্থিক বা বানিজ্যিক উদ্দেশ্য তৈরি নয়, কোন ব্যক্তি মালিকানাধীন নয়, জনসাধারনের ব্যবহারের জন্য, সকলের জন্য সমানভাবে গম্য এবং সকল মানুষ উপভোগ করতে পারে। কখনো কখনো কিছু কিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন গণপরিসর ও দেখা যায় যা সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকে। তবে সরকারী মালিকানাধীন গণপরিসর সবসময় সকলের জন্য উন্মুক্ত ও সহজ গম্য। সর্বত্র সকল বয়স, শ্রেনী, পেশা, বর্ন, গোত্র ও সম্প্রদায়ের মানুষ বিশেষ করে নারী, শিশু, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অভিগম্যতা ও সংকুলান নিশ্চত করাটা জরুরী। সামাজিকতা, বিনোদন ও অবসরে সময় কাটানোর জন্য পার্ক ও খেলার মাঠ ছাড়াও জলাধার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অঙ্গন, ঈদগাহ মাঠ, রাস্তা/ফুটপাত/মার্কেট প্লাজাসহ অন্যান্য স্থানসমুহ সুষ্ঠভাবে ব্যবহার করার মাধ্যমে ঢাকা শহরে ব্যপকভাবে উন্মূক্ত স্থান ও গণপরিসর সৃষ্টি করা সম্ভব।
মতবিনিময় সভায় গণপরিসর ও উন্মুক্তস্থান সংরক্ষণ ও উন্নয়নে বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন এবং তাদের জবাবদীহিতার আওতায় আনা; রাজউক, সিটি কর্পোরেশন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসমূহকে বাৎসরিক বাজেট বরাদ্দ রাখা; গণপরিসর ও উন্মুক্ত স্থান এর পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণর জন্য পৃথক সংস্থা তৈরী করা; উদ্যান ও উন্মুক্তস্থানসমূহ অবৈধ দখলমুক্ত করা এবং সেখানে গমনের জন্য হাঁটার উপযোগী করে গড়ে তোলা; জনসাধারনের জন্য পার্ক ও খেলার মাঠসমূহের তালিকা ও ম্যাপ ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শণ এবং সিটিজেন চার্টার এর মাধ্যমে জনসাধারনের অধিকারের ও কর্তব্যের জায়গাগুলো সুনির্দিষ্ট করে দেয়া; নদী, খাল ও যে কোন জলাধারের পার উন্নয়নের ক্ষেত্রে পাড়ে হাঁটা ও বসার ব্যবস্থা করা; ঢাকা শহরেরে কানাগলির শেষ প্রান্ত অব্যবহৃত স্থানসমূহ যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে শিশুদের খেলার স্থানে রূপান্তর করা; পরিকল্পনামফিক শহরের রাস্তা, ফুটপাত, বাড়ির সামনে, মার্কেটের সামনে, এবং অন্যান্য স্থানসমূহকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে ব্যবহার করা; রাস্তা/ ফুটপাতে হকারদের জন্য দাগ দিয়ে নম্বর উল্লেখপূর্বক লাইসেন্সর বিনিময়ে সুনির্দিষ্টভাবে বসার স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া; ঈদ ব্যতীত বছরের অন্যান্য সময়ে স্থানীয় জনগণের কল্যাণার্থে বহুমুখী ব্যবহারের জন্য ঈদগাহের জন্য নির্ধারিত স্থান উন্মুক্তস্থান হিসেবে ব্যবহার করা; সবুজ- অবকাঠামো, রান্তা, খোলা উদ্যান, পার্ক, জলাশয় এবং খেলার মাঠসমূহকে সবুজ- নেটওয়ার্কিং এর আওতায় নিয়ে আসা এবং সকলের প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করা; জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণীসমূহের বাসস্থান রক্ষার ব্যাবস্থা নেয়া; শিক্ষা- প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের নিজস্ব খেলার মাঠ বা খোলা উদ্যান আছে, সেখানে ঐ সকল প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়সূচীর পর তা অত্র এলাকার জনসাধারণের ব্যাবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার সুপারিশ করা হয়।