পানি সম্পদের পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা ও যথাযথ নিরাপদ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা দারিদ্র বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশগত স্থায়ীত্বশীলতা নিশ্চিতকরণের অন্যতম নিয়ামক। প্রকৃতি, কৃষি, শিল্প, খাদ্য, বিদ্যুাৎ, স্বাস্থ্য, নগরায়ন ও নারীর সমতায়নে পানি অপরিহার্য। অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে ঢাকা শহরের অনেক অঞ্চলে ভূগর্ভস্ত পানির স্তর ৭০ মিটার নেমে গেছে। শিল্পকারখানা একদিকে বিপুল পরিমাণ পানি ব্যবহার করছে, অন্যদিকে অপরিশোধিতভাবে শিল্প বর্জ্য ফেলে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে। 22 মার্চ বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষ্যে সকাল ১১টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘর এর সামনে থেকে প্রেসক্লাব পর্যন্ত বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, এনজিও ফোরাম ফর পাবলিক হেলথ, নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলন, অরুণোদয়ের তরুণ দল, মাস্তুল ফাউন্ডেশন, বিসিএইচআরডি, সিরাক-বাংলাদেশ, ইয়ূথ কোয়ালিশন ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এবং প্রত্যাশার যৌথ উদ্যোগে “পানির অধিকার প্রতিষ্ঠায় পদযাত্রা’ কর্মসূচিতে বক্তারা এ কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, গত দশকে পানির ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি হওয়ার সত্বেও বিশ্বে ৭৪ কোটি ৮০ লাখ মানুষ বিশুদ্ধ পানি পায় না। ২৪৮ কোটি মানুষ সঠিক পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থার আওতায় নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ, বেশির ভাগ পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ লোকের দৈনিক চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজন ৭ দশমিক ৫ লিটার পানি। মৌলিক চাহিদা ও ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য চাহিদা ও বিশুদ্ধ খাদ্য পানীয়ের জন্য প্রতিজনে ২০ লিটারের মতো পানি প্রয়োজন হতে পারে।
বক্তারা আরো বলেন, পানি আমাদের অধিকার। সকলের জন্য পানি নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। পানি সঙ্কট মোকাবিলা ও পানির যোগান নিশ্চিত করতে সকল প্রকার পানির উৎস নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর ও জলাশয়ের দূষণ প্রতিরোধ ও ভরাট বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। ভরাট ও দূষণের কারণে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। নির্ভরতা বেড়েছে ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর। বর্তমানে দেশের ৯৮ ভাগ খাবার ও শুকনো মৌসুমে সেচ কাজে ৮০ ভাগ পানি ভূ-গর্ভস্থ থেকে সরবরাহ করা হয়। অনিয়ন্ত্রিত ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন প্রকৃতি দূর্যোগ বয়ে আনবে। পানির উৎসসমূহ সংরক্ষণ ও পরিকল্পনার মাধ্যমে সেগুলির যথাযথ ব্যবহারই ভূ-গর্ভস্থ পানি ব্যবহার হ্রাস করতে পারে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পানি প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এর উৎসগুলো ভরাট ও দূষণমুক্ত করে সংরক্ষণ করা অত্যান্ত জরুরী।
বক্তারা পদযাত্রা থেকে ভু-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার হ্রাস এবং ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন করা, পানির উৎস হিসেবে নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয় রক্ষা আইন বাস্তবায়ন করা, শিল্প-কারখানার, পয়ঃবর্জ্য এবং গৃহস্থালী বর্জ্য নদী বা জলাশয়ে ফেলা বন্ধ করা, নদী, খাল, বিলসহ যে কোন ধরনের জলাশয়কে পেছনে দিয়ে স্থাপনা বা পরিকল্পনা নিষিদ্ধের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়ন, পুকুর, দীঘি, খাল-বিল-নদীসহ যে কোন জলাশয় ভরাট বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহারে ব্যবস্থা করতে হবে, শহর ও নগর এলাকায় নতুন করে পুকুর, জলাধার তৈরি করার সুপারিশ করেন।।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব এর সভাপতিত্বে ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান এর সঞ্চালনায় পদযাত্রা কর্মসুচির সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন নিরাপদ ডেভলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর পরিচালক ইবনুল সাঈদ রানা, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র নির্বাহী সদস্য মহিদুল হক খান, বাপার’ বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক মিহির বিশ্বাস, উবিনীগ এর গবেষণা উপদেষ্ঠা ড. সোবহান, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’র ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার সৈয়দা অনন্যা রহমান, মাস্তুল ফাউন্ডেশন এর সদস্য তানভির আল মামুন, বিসিএইচআরডি’র নির্বাহী পরিচালক মাহাবুবুল হক প্রমূখ।