English | Bangla
তামাক বিরোধী সার্ক সম্মাননা পেলেন সাইফুদ্দিন আহমেদ
বৈশ্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় অবদান এর স্বীকৃতি হিসাবে তামাক বিরোধী সার্ক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ। আবু ধাবীতে চলমান (১৭-২১ মার্চ) ১৬তম তামাক অথবা বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। ভারতের ক্যান্সার এইড সোসাইটি কর্তৃক প্রবর্তিত এ সম্মাননা দক্ষিণ এশিয়ান ৮টি দেশের মধ্যে একজনকে প্রদান করা হয়। বিরল এ সম্মাননা আবু ধাবীর যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন সার্জন জেনারেল এর নামাঙ্কৃত ‘লুথার জে টেরি এওয়ার্ড’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রদান করা হয়।  সার্কভূক্ত সবগুলো দেশের মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণে একমাত্র ব্যক্তি হিসাবে সাইফুদ্দিন আহমেদকে নির্বাচিত করা হয়, যা বাংলাদেশের তামাক নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ এক অর্জন। 
 
ইতোপূর্বে সাইফুদ্দিন আহমেদ ২০০৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত ‘ওয়াল্ড নো টোব্যাকো ডে এওয়ার্ড ২০০৬’ লাভ করেন। এছাড়া তাঁর প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবী নাগরিক সংগঠন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট ২০০১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একই সম্মাননা অর্জন করে। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর কার্যক্রম সমগ্র পৃথিবীতে বেসরকারি/স্বেচ্ছাসেবী পর্যায়ের তামাক বিরোধী কার্যক্রমে একটি মডেল হিসাবে পরিগণিত। বিশ্বব্যাংক ও রিচার্স ফর ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো কন্ট্রোল (রিটস/আরআইটিসি) এর ২০০৩ সালে প্রকাশিত ‘টোব্যাকো কন্ট্রোল পলিসি: স্ট্রাটেজি, সাকসেস ও সেটব্যাকস” শিরোনামের যৌথ প্রকাশনায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সামাজিক আন্দোলনকে অন্যান্য দেশের জন্য নমুনা হিসাবে উপস্থাপন করে। 
 
তামাক নিয়ন্ত্রণে অন্যান্য গবেষকদের সঙ্গে তাঁর যৌথ গবেষণা নিবন্ধ বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত ও সম্মেলনের প্রকাশনায় অন্তর্ভূক্ত রয়েছে। এর মধ্যে ২০০০ সালে পরিচালিত ‘তামাক ও দরিদ্রতা’ (হাংরি ফর টোব্যাকো) সমগ্র পৃথিবীতে একটি আলোচিত গবেষণা, যা ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নাল ‘টোব্যাকো কন্ট্রোল’ এ প্রকাশিত হয়। এ গবেষণার উপর ভিত্তি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০০৪ সালের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস এর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছিল। এছাড়া ২০০৯ সালে ‘টোব্যাকো এন্ড পোভার্টি’ নামে অপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন একই জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল।  
 
সাইফুদ্দিন আহমেদ ১৯৯৯ সাল থেকে বৈশ্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন সম্মেলনে বাংলাদেশের বেসরকারি পর্যায়ের প্রতিনিধিত্ব করছেন। যথা: ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রতি ৩ বছর পরপর অনুষ্ঠিত ৫ম থেকে ১০ম এশিয়া-প্যাসিফিক কনফারেন্স অন টোব্যাকো অর হেলথ (এপ্যাক্ট), ২০০০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রতি ৩ বছর পরপর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত ১১তম থেকে ১৫তমওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অন টোব্যাকো অর হেলথ (ডব্লিউসিটিওএইচ), আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি এফসিটিসি বিষয়ক সম্মেলন ইন্টারগভর্ণমেন্টাল নেগোশিয়েন বডি (আইএনবি) ও কনফারেন্স অব পার্টি (সিওপি) ইত্যাদি সম্মেলনে অতিথি প্রতিনিধি হিসাবে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে বিভিন্ন বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে, ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার কনগ্রেস, ওয়ার্ল্ড লাং কনফারেন্স, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভিন্ন আঞ্চলিক, মহাদেশীয় ও বৈশ্বিক সম্মেলনে তিনি অতিথি হিসাবে অংশগ্রহণ করেন।
 
উল্লেখ্য, ভিসা প্রাপ্তিতে বিলম্ব হওয়ায় সম্মাননা গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি সাইফুদ্দিন আহমেদ। তাঁর পক্ষে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা ও হেলথব্রিজ এর আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরমসন এ সম্মাননা গ্রহণ করেন। আমেরিকান ক্যানাসার সোসাইটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. জন শেরিফিন ও সিনিয়র সহ-সভাপতি শেলি কাউয়েল এ সম্মাননা তুলে দেন। এ সময় ক্যান্সার এইড সোসাইটি-ইন্ডিয়ার মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পিযুশ গুপ্ত ও পরিচালক নেহা ত্রেপাতি উপস্থিত ছিলেন। 
 
পেশাগত প্রয়োজনে তিনি গত ১৮ বছরে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মেক্সিকো, উরুগুয়ে, ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, হাঙ্গেরি, নেদারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, নরওয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা, কেনিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, মায়ানমার, ভারত, নেপাল, শ্রীলংকা, ভুটান, মালদ্বীপ, লাওস, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, হংকং, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ৪০টির অধিক দেশে ভ্রমণ করেছেন।