জ্বালানি নির্ভরতা হ্রাস, যাতায়াত খরচ কমানো, দূষণ নিয়ন্ত্রণে এবং সুস্থতার জন্য হাঁটার গুরুত্ব অপরিসীম। ঢাকা শহরে গলি রাস্তা, ফুটপাত এবং রাস্তা পারাপারে পথচারীদের নানা প্রতবিন্ধকতার সম্মূখীন হতে হয়। যে কারণে পথচারীরাই বেশিরভাগ সড়ক দূর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকে। তাই পথচারীবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে উদাহরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে ধানমন্ডি সাত মসজিদ সড়ককে আদর্শ হিসেবে উন্নয়ন করা হবে। আজ সকাল ১১.০০ টায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট কর্তৃক সম্মিলিতভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সেমিনার কক্ষে (নিচতলা) “নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দে হেঁটে যাতায়াতঃ আমাদের করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ ঘোষনা দেন। এজন্য আয়োজক সংগঠন গুলির নিকট থেকে একটি পরিকল্পনা প্রদানের আহ্বান জানানো হয়।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ হোসেন তার প্রবন্ধে বলেন, বিদ্যমান আইন নীতিমালায় উল্লেখিত ইতিবাচক ধারাসমূহ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন করা; হাঁটার পরিবেশ উন্নয়নে মানদন্ড ও নির্দেশিকা তৈরি; নন মোটরাইজড ট্রান্সপোর্ট সেল বা পৃথক ডেস্ক করা; হকার নীতিমালা প্রণয়ন করা; জোরালো পার্কিং নীতিমালা করা; পৃথক বরাদ্দের পাশাপাশি প্রতিটি প্রকল্পে বরাদ্দ রাখা; সংশ্লিষ্টদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা; নিয়মানুযায়ী ফুটপাত নির্মাণ, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করা; সমতলে রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা করা; কিছু রাস্তা গাড়িমুক্ত করা; হকার সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনায় আনা; গাছের ছায়া, বসার ব্যবস্থা, পাবলিক টয়লেট, আবর্জনার পাত্র নিশ্চিত করা; ফুটপাতে গাড়ি পার্কিং এবং মোটরবাইক চলাচল বন্ধ করা; গুপরিসর এবং উন্মুক্ত স্থান তৈরি করা এবং পথচারীদের সচেতন করার সুপারিশ করেন।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন এর সদস্য এ.কে এম. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের রাস্তা পারাপারে জ্রেবা ক্রসিং এর উপর জোর দিতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড পথচারীকে প্রাধান্য দিয়ে সম্পন্ন করা প্রয়োজন। সিআইপিআরবি এর সিনিয়র সাইন্টিস্ট কামরানুল বাসেত বলেন, ভবিষ্যতে পথচারীদের কথা চিন্তা করে এদের সুবিধা প্রদান করার জন্য আমাদের বিদ্যালয়সমুহকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা যেন শৈশব থেকেই বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন এর নেটওয়ার্ক বাপা-বেন অস্টেলিয়ার সমন্বয়ক কামরুল আহসান খান বলেন, আমাদের একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন সরকারের পক্ষে একা কাজ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন প্রতিটি কাজে জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করা। একই সাথে তিনি আরো বলেন, আমরা যে ধরনের প্রকল্প হাতে নেই তা যেন জনবান্ধব এবং বাস্তবমুখী কার্যক্রম হয় সেই বিষয়টির দিকে নজর রাখা প্রয়োজন। নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম এর সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না প্রতিটি ফুটপাত পথচারীবান্ধব করার জন্য সিটি কর্পোরেশনকে অনুরোধ করেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আশিকুর রহমান বলেন, আমরা একটি এলাকাকে মডেল হিসেবে নিয়ে কাজ করতে পারি। বুয়েট এর ইউআরপি বিভাগের মুসলেহউদ্দিন হাসান বলেন, বুয়েট এর নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট মিলে ধানমন্ডি সাত মসজিদ রোড ডিজাইন এর কাজ করা হচ্ছে। আমরা এটি সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে শেয়ার করব। তিনি আরো বলেন আমাদের একটি বিভাগ প্রয়োজন। যারা পথচারী এবং অযান্ত্রিক যান বিষয়ে কাজ করবে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক সৈয়দ মাহাবুবুল আলম বলেন, পথচারীর নিরাপদ রাস্তা পারপারের জন্য প্রয়োজনীয় স্থানে জেব্রা ক্রসিং অঙ্কন এবং নিয়মিত রং করার জন্য পর্যপ্ত বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে। ফুটপাতের উপরে বিভিন্ন বিল বোর্ড, ব্যানার, পিলার রয়েছে তা পথচারীর জন্য সহায়ক নয়। তাই এগুলি ফুটপাতে তৈরি বন্ধ করা প্রয়োজন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আনছার আলী খান বলেন, আমরা আমাদের শহরকে বসবাসযোগ্য হিসেবে তৈরি করতে কাজ করে যাচ্ছি। একদিনেই এটি সম্ভব নয়, ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে কাজ করলে এটি সম্ভব হবে। এজন্য আমরা ধানমন্ডি সাত মসজিদ এলাকাকে মডেল হিসেবে নিয়ে কাজ করলে, পরে তা অন্য এলাকাতেও কাজে লাগানো সম্ভব হবে। এজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এবং প্রত্যেককে নিজ নিজ জায়গা হতে সক্রিয় ভুমিকা পালন করতে অনুরোধ করেন।
উক্ত মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, প্রধান প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্ত বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মাহাবুবুর রহমান এবং প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলামসহ আরো অনেকে।