পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ আইন প্রণয়ন এবং পরিবেশ আদালত গঠন দুইটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দক্ষ লোকবল, অবকাঠামো এবং উদ্যোগের অভাবে পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ আইন ও আদালত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারছে না। বর্তমানে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট এই তিনটি বিভাগীয় শহরে পরিবেশ আদালত রয়েছে। এ সম্পর্কে জনসাধারণ অবগত না থাকা এবং দেশের সব অঞ্চল থেকে আসা-যাওয়া সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল হওয়ায় পরিবেশ আদালতগুলিতে খুবই কম সংখ্যক মামলা রয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় জনসাধারনের নিকট পরিবেশ আদালতের সুফল পৌঁছে দিতে প্রতিটি জেলায় পরিবেশ আদালত গঠন জরুরী, যা বিদ্যমান পরিবেশ আদালত আইনে উল্লেখ রয়েছে। এই প্রক্রিয়া আরম্ভ করার পাশাপাশি অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে রাজশাহী ও খুলনা এই দুটি বিভিাগীয় শহরে পরিবেশ আদালত স্থাপন করতে হবে। ২৫ জুন ২০১৪, বুধবার, সকাল ১১.০০ টায় বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর কৈবর্ত সভাকক্ষে (১৪/৩/এ জাফরাবাদ, রায়েরবাজার, ঢাকা) “পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ আইন ও আদালত” শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিমত প্রকাশ করেণ।
আলাচনা সভায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক সাইফুদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের প্রাক্তন আইজিপি এবং ল’ কমিশনের সদস্য ড.এম এনামূল হক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারন সম্পাদক ডঃ মোঃ আব্দুল মতিন, মর্ডান ক্লাব এর সভাপতি আবুল হাসনাত, এনডিএফ এর চেয়ারম্যান ইবনুল সাইদ রানা, ছিন্নমূল হকার সমিতির সভাপতি কামাল সিদ্দিকী, এ.কে. বরাল বাপা সহ অনেকে। সভঅর শুরু প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়র্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক, এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম এবং সঞ্চালনা করেন ওয়র্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ রহমান।
ওয়র্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুল আলম তিনি তার প্রবন্ধে, পরিবেশ আইন বাস্তবায়ন না হওয়ার অন্তরায় হিসেবে প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালীকরণ না করা, দক্ষ ও পর্যাপ্ত জনবল এবং বাজেট বরাদ্দ না থাকাসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এখনও আমরা সারা দেশে পরিবেশ আদালত প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়নি এবং যে আদালতগুলো আছে তা মামলাশূন্যতায় ভুগছে। পরিবেশ আইন সম্পর্কে সচেতনা বৃদ্ধি, পরিবেশ আদালতে মামলায় উৎসাহ প্রদান, প্রতি জেলায় পরিবেশ আদালত ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয় সৃষ্টি এবং আইন ও নীতি বিষয় সার্পোট ইউনিট তৈরি করার কথা বলেন।
বাংলাদেশ পুলিশের প্রাক্তন আইজিপি এবং ল’ কমিশনের সদস্য ড. এম এনামূল হক বলেন, ১৯৯২ সালে প্রথম পরিবেশ আইন হয়। আইনে বলা হয়েছে প্রতিটি বিভাগে পরিবেশ আদালত স্থাপন করা জন্য। কিন্তু বর্তমানে ৩ টি পরিবেশ আদালত রয়েছে যা দিয়ে পরিবেশ আইন বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তিনি কমপক্ষে পুরাতন যে বিভাগগুলো সেগুলোতে পরিবেশ আদালত প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। আমাদের দেশে আইনের অভাব নেই কিন্তু সেগুলোর বাস্তবায়ন নেই। পরিশেষে বলেন আমাদের রীট এর প্রবণতা থেকে বের হয়ে এসে পরিবেশ আদালতে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।
নিরাপদ ডেভোলেপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক ইবনুল সাঈদ রানা বলেন, পরিবেশ আইন বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে মন থেকে পরিবেশ কে ভালোবাসতে হবে। আমাদের সকলকে নিজ নিজ পরিবার থেকে পরিবেশ আইন মানার প্রবণতা সৃষ্টি করতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর যুগ্ম সম্পাদক, জে .কে. বড়াল বলেন, পরিবেশ আইন কার্যকর করতে হলে পরিবেশ নিয়ে যে সকল সংগঠনসমূহ কাজ করে তাদের একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে । পাশপাশি প্রত্যেক সংগঠনকে তাদের কার্যক্রম এর মধ্যে পরিবেশ আইন ও আদালতকে ইস্যু হিসেবে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারন সম্পাদক ডা. আব্দুল মতিন বলেন, বর্তমানে যে পরিবেশ আইন ও আদালত আছে তা পেতে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। প্রথমে জনসাধারণের মামলা করার সুযোগ ছিল না কিন্তু বর্তমানে এই সুযোগ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন পরিবেশ আইন বাস্তবায়নে পরিবেশ অধিদপ্তরকে আরো সক্রিয় হতে হবে। পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয়ের সাথে সম্পর্কিত। কাজেই পরিবেশ আইন বাস্তবায়ন করতে হলে সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক, সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে পরিবেশবাদীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণে দেশের স্থানীয় জনগণ যাতে সহজে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে এ লক্ষ্যে পরিবেশবাদীদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। পরিবেশ আইন বাস্তবায়নে যে সল প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলোকে চিহ্নিত করে সকলকে একসাথে নিয়ে কাজ করতে হবে।