“নারী গৃহস্থালি কাজের মাধ্যমে পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। নারী গৃহে পরিবারের সবার জন্য খাবার তৈরি, পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, শিশু ও বৃদ্ধদের সেবা প্রদান, পাঠদান, শিশুদের বিদ্যালয়ে আনা-নেওয়াসহ গৃহস্থালিনির্ভর কাজের ব্যবস্থাপকের ভূমিকা পালন করেন। এমনকি যেসব নারী পরিবারের প্রয়োজনে পারিশ্রমিক/সম্মানির বিনিময়ে বাইরে কাজ করেন তারাও পরিবারের যাবতীয় কাজের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন। সামগ্রিকভাবে গৃহস্থালি কাজে নারীর কাজের অবদান জিডিপির চাইতেও বেশি। নারীর এ অবদানকে জিডিপিতে অন্তর্ভূক্ত করে গৃহস্থালি কাজকে সম্মান জানানো এবং পরিবার থেকে রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে গৃহস্থালি কাজের সঙ্গে যুক্তদের গৃহিনীর পরিবর্তে গৃহ ব্যবস্থাপক হিসাবে পরিচয় তুলে ধরার জন্য আহবান জানানো হয়। নারীর গৃহস্থালি কাজকে মূল্যায়ন করা হলে তবেই নারীর প্রতি বৈষম্য, সহিংসতা অনেকাংশে কমে আসবে।”
৯ মার্চ ২০১৪ তারিখ সকাল ১১টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর উদ্যোগে “গৃহস্থালি কাজের মূল্যায়নের ভিত্তিতে জাতীয় অর্থনীতিতে নারীর অবদান” শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য উপস্থাপন ও সেমিনারে এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ এর সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংস্থার পরিচালক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কানাডাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন হেলথব্রিজ এর আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন। আলোচনা করেন নারীপক্ষ’র ব্যবস্থাপক সামিয়া আফরিন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক মনোয়ারা বেগম।
দেবরা ইফরইমসন গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, নারীরা গৃহে প্রতিদিন ৪৫ রকমের কাজ এবং গড়ে ১৬ঘন্টা সময় কাজ করেন। সময় ও কাজ হিসাবে নারীর গৃহস্থালি কাজের অর্থমূল্য রয়েছে। সারাদেশে নারীদের অবদানকে মাঝারি মানের সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তবে ১৬ঘন্টার সময়কে ৮ঘন্টার অর্থমূল্যে হিসাব করা হয়েছে। ২০১২ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী নারীদের গৃহস্থালি কাজে যে অবদান রাখছে তার আর্থিক মূল্য দাঁড়ায় বা ২২৭.৯৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার (১৮২৩৪.৮১ বিলিয়ন টাকা) থেকে ২৫৮.৮২ বিলিয়ন ইউএস ডলার। যা বাংলাদেশের জিডিপির দ্বিগুণেরও বেশি। উল্লেখ্য, ২০১২ সালের জিডিপি’র পরিমাণ ছিল ১১৮.৭ বিলিয়ন ডলার।
সামিয়া আফরিন বলেন, নারীর গৃহস্থালি কাজের মূল্যায়ন যদি জিডিপিতে অন্তর্ভূক্ত করার মাধ্যমে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়, তবে নারীর প্রতি পরিবার-সমাজ ও রাষ্ট্রের যে চিরন্তন ধারণা ‘নারী কিছুই করে না’ তার পরিবর্তন সম্ভবপর হবে। এবং নারীর প্রতি নেতিবাচক এ ধারণার পরিবর্তন হলেই পরিবার-সমাজ-রাষ্ট্রে নারীর প্রতি সহিংসতা কমে আসবে। মনোয়ারা বেগম বলেন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এসব কাজের বিস্তৃতি ঘটাতে হবে। পাশাপাশি নারীকে গৃহিনী হিসাবে তুলে না ধরে গৃহ ব্যবস্থাপক হিসাবে তুলে ধরতে হবে।
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ গৃহস্থালি কাজে নারীদের যে অবদান জাতীয় অর্থনীতিতে তার গুরুত্ব ও অবদান খুঁজে বের করার জন্য ২০০৬ সালে প্রথম গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ কাজ পরবর্তী সময়ে অনেক ব্যক্তি ও সংগঠনকে অনুপ্রাণিত করে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোসহ অনেক বেসরকারি সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। ফলে ‘নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১’-তে নারীর গৃহস্থালি কাজের গুরুত্ব অনুধাবন করার কথা বলা হয়। এ ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। নারীর অবদানকে জিডিপিতে অন্তর্ভূক্ত করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে।
সংস্থার প্রকল্প সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম সুজন-এর সঞ্চালনায় সেমিনারে পরামর্শ তুলে ধরেন সংস্থার ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার সৈয়দা অনন্যা রহমান। মুক্ত আলোচনায় উবিনীগ এর কর্মকর্তা শাহীনুর বেগম, এসওএস শিশুপল্লী বাংলাদেশ এর কর্মকর্তা হাসিনা পারভীন, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড এর জনসংযোগ ব্যবস্থাপক নুর কামরুন নাহার, পবা’র সংগঠক এ কে এম সিরাজুল ইসলাম, কারিতাস বাংলাদেশ-এর কর্মকর্তা জেন্ডার সমন্বয়ক জুলিয়েট লিপিকা সরকার, কর্মকর্তা জেমস মালাকার ও শিখা রানী হালসোনা, দৈনিক কালের কন্ঠ’র জেষ্ঠ্য প্রতিবেদক নিখিল ভদ্র, লেখক সুলতানা শাহরিয়া পিউ ও এম এ ছিদ্দিক, হীড বাংলাদেশ এর লিয়াজো অফিসার সুলতানা রাজিয়া বানু প্রমুখ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন নারী সংগঠনের প্রতিনিধি, গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।