বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০০৪ সালের তথ্যানুযায়ী, ক্যান্সার, হার্ট এটাক, স্ট্রোক, ডায়বেটিস, যক্ষাসহ তামাকজনিত ৮টি রোগে আক্রান্ত হয় বাংলাদেশে ১২ লক্ষ মানুষ, যার মধ্যে ৩ লক্ষ ৮২ হাজার মানুষ অকাল পঙ্গুত্ববরণ করে এবং ৫৭ হাজার মানুষ সরাসরি মৃত্যুবরণ করে। ২০০৯ সালের তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে ৪৩.৩ ভাগ মানুষ তামাক সেবন করে। ব্যাপক জনগোষ্ঠীতে তামাকের ব্যবহার থেকে নিরুৎসাহিত করতে বিড়ি-সিগারেট-জর্দা-গুলসহ সব রকম তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ছবিসহ সতর্কবাণীর প্রচলন জরুরি। যা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে উল্লেখ করা হয়েছে। এজন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীন দ্রুত বিধিমালা পাস ও তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবির প্রচলন দ্রুত করতে হবে।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট ও প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন এর যৌথ উদ্যোগে ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪ টায় বাংলা একাডেমির সামনে বইমেলায় আগত মানুষের মধ্যে তামাক ও ধূমপানের ক্ষতিকর বিষয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা কর্মসূচী কর্মসূচীতে এ দাবি জানানো হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ এবং সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রকল্প সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম সুজন। এতে সম্মানিত অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক কাজী হায়াত ও ছটকু আহমেদ। এছাড়া কর্মসূচীতে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার সৈয়দা অনন্যা রহমান, সোস্যাল এডভান্সমেন্ট ফোরাম (সাফ) এর নির্বাহী পরিচালক মীর আবদুর রাজ্জাক, বিউটিফুল ফিউচার এর নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
কাজী হায়াত বলেন, ধূমপানের মাধ্যমে নেশার শুরু হয়। তাই নেশা থেকে দূরে রাখতে হলে তরুণ প্রজন্মকে ধূমপান থেকে দূরে রাখতে হবে। তিনি কিশোর বয়সী কন্যা ঐশী কর্তৃক বাবা-মা হত্যাকান্ডের উদাহরণ টেনে বলেন, তরুণ প্রজন্মকে ধবংশ করে দিচ্ছে নেশা। তাই সব ধরণের নেশা থেকে তরুণ প্রজন্মকে দূরে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
ছটকু আহমেদ বলেন, ধূমপান বা তামাক সেবন শুধু স্বাস্থ্যগত দিক থেকেই নয়, এটা মানসিক, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দিক থেকেও মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই বিড়ি-সিগারেটসহ তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান সহ মানুষের মধ্যে তামাকের বহুমাত্রিক ক্ষতির প্রচারণা বাড়াতে হবে।
হেলাল আহমেদ বলেন, একটি ছবি হাজার শব্দের চেয়ে শক্তিশালী। তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে স্বাস্থ্যক্ষতির ছবি মানুষকে তামাক ব্যবহারে নিরৎসাহিত করবে। আর তাই কোম্পানিগুলো ছবিসহ সতর্কবাণীর বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখতে বিভ্রান্তকর প্রচারণা শুরু করেছে। সরকারকে তামাক কোম্পানির ভ্রান্ত প্রচারণার বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।
আমিনুল ইসলাম সুজন গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাট্স) এর তথ্য উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে দরিদ্র ও নিরক্ষর মানুষের মধ্যে তামাক সেবনের হার বেশি। নিরক্ষর মানুষকে তামাক সেবনের স্বাস্থ্যক্ষতি সম্পর্কে সচেতন করতে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ছবিসহ সতর্কবাণীর বিকল্প নাই।
কর্মসূচী চলাকালে বইমেলায় আগত জনসাধারনের মধ্যে তামাক সেবন ও ধূমপানের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে প্রচারণামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়। এ সময় অরুণোদয়ের তরুণ দল, সুন্দর জীবন, নতুন জীবন গড়ি, গ্রীণ মাইন্ড সোসাইটি, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (এনডিএফ), সিরাক বাংলাদেশ, বিসিএইচআরডি, প্রজ্ঞা, ইসি বাংলাদেশ, সাফসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।