“বায়ু দূষণে বাংলাদেশ এবার বিশ্ব ‘চ্যাম্পিয়ন’! দূষণ বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ কর” শীর্ষক সমাবেশ
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট সহ ১২টি পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনের যৌথউদ্যোগে ৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৪, শুক্রবার, সকাল ১০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘‘বায়ু দূষণ বন্ধে অবিলম্বে কার্যকর ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবীতে’’ এক নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বাপা’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোঃ আব্দুল মতিন এর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন বাপা’র বায়ু ও শব্দ দূষণ প্রতিরোধ কর্মসূচীর সদস্য সচিব ও সুন্দর জীবনের চেয়ারম্যান এম সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, বাপা’র নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলাম ও ড. মাহবুব হোসেন, সেবা’র নির্বাহী পরিচালক ডাঃ মোঃ নুরুদ্দিন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট’র ন্যাশনাল এডভোকেসী কর্মকর্তা মারুফ রহমান, গ্রীন ভয়েস’র সহসমন্বয়ক হুমায়ন কবির সুমন, বাপা’র জাতীয় পরিষদ সদস্য এবিএম আনিসুজ্জামান, বাপা’র জীবন সদস্য ফারজানা শাহনাজ মজিদ, খিলগাঁও সামাজিক সংস্থার মু. হাফিজুর রহমান ময়না এবং আলহাজ্ব অধ্যাপক কামাল আতাউর রহমান প্রমুখ। সমাবেশে বাপা’র যুগ্মসম্পাদক জাকির হোসেন, বেন অস্ট্রেলিয়ার সমন্বয়ক কামরুল আহসান খান, ইউনাইটেড পিপলস ট্রাস্ট’র প্রতিষ্ঠাতা মো: আলী হাজারী ও আয়োজক সংগঠনসমূহের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিগন অংশ গ্রহন করেন।
সমাবেশে বক্তাগন বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগন প্রতিবছরের মত এবারও ‘গ্লোবাল এনভায়রনমেন্টাল পারফরসেন্স অ্যান্ড ইনডেক্স’ নামে যে বৈশ্বিক সূচক প্রকাশ করেছেন। ২০১৪ সালের এ গবেষণায় এবার মোট ১৭৮টি দেশের সার্বিক পরিবেশগত পরিস্থিতি ও জীবনমানে তার প্রভাব উঠে এসেছে। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, সার্বিক জীবনমানের ভিত্তিতে পরিবেশগতভাবে সুরক্ষিত দেশগুলোর তালিকায় ১৭৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৯তম এবং শুধু বিশুদ্ধ বাতাসের নিরিখে করা পৃথক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৭৮তম। গবেষক দলের অভিমত, পরিবেশ সমীক্ষায় পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর বেশিরভাগই রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও আনুষঙ্গিক সমস্যায় জর্জরিত, যা পরিবেশগত উন্নতির ভাবনা থেকে তাদের সরিয়ে রেখেছে। দরিদ্র দেশগুলোতে শক্তির ব্যবহার ও পুনর্ব্যবহারে প্রক্রিয়াগত ত্র“টি থাকার কারণে পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। এ সকল তথ্য একদিকে সাধারণ মানুষের মত আমাদেরকেও চরমভাবে আতঙ্কিত করেছে এবং উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। বক্তাগন বলেন, বর্তমান পর্যায়ে শুধু ঢাকা মহানগরী নয়, ভয়াবহ এই বায়ূদূষণের মতো অবস্থা সমগ্র দেশের প্রায় সব শহর, বন্দর এবং গঞ্জে। মারাত্মক এই দূষণের হাত থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানিয়ে নিম্ন লিখিত দাবিগুলো উত্থাপন করা হয় ও তা অবিলম্বে বাস্তবায়নের আহবান জানানো হয়। দাবীসমূহঃ
(১) সেকেলে পদ্ধতির সমস্ত ইটভাটা বন্ধ করে হাইব্রিড হফম্যান বা জিগজ্যাগ পদ্ধতির ইটভাটা চালু করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে স্বল্পসুদে ইটভাটার মালিকদের ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। (২) কাঠ পোড়ানো ও যত্রতত্র গাছকাটা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। বাসাবাড়ির রান্নাঘরে লাকড়ি পোড়ানো ক্রমান্বয়ে বন্ধ করতে হবে, বিকল্প জ্বালানী চালু করতে হবে, নারী স্বাস্থ্য উন্নয়নে রান্নাঘরে চিমনিযুক্ত চুলা বসাতে হবে। (৩) নিম্নমানের কয়লা আমদানী বন্ধ করতে হবে; বিকল্প টেকসই জ্বালানী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। (৪) ১৬ বছর বা তার থেকে বেশি পুরোনো যানবাহন অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে; রিকন্ডিশন্ড গাড়ী আমদানি হ্রাস করতে হবে। যান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও প্রশাসনকে নির্মোহ, দূর্ণীতিমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব করতে হবে। (৫) ট্যাক্সিসহ ছোট মটরযানের সংখ্যা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে; রেলগাড়ী, বড় বাস ও ণৌ-যান সহ গণপরিবহন বৃদ্ধি করতে হবে। সব বড় রাস্তার পাশে নিরাপদ, প্রশস্থ, দখলমুক্ত ফুটপাত নিশ্চিত করতে হবে। (৬) মাটিকাটার যন্ত্র, মাটিবাহী ট্রাক ও গরু-মহিষের গাড়ী থেকে রাস্তায় মাটি বা বালু পড়া বন্ধ করতে হবে। (৭) ভোর ছয়টার মধ্যে সমস্ত রাস্তার ঝাড়ুকর্ম সম্পন্ন করতে হবে। একই সময়ের মধ্যে ময়লাবাহী সমস্ত ট্রাকগুলোকে সযত্নে ময়লা পরিবহন নিশ্চিত করতে হবে। (৮) দেশব্যাপী দেশী গাছ লাগানোর কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে এবং এজন্য নিয়মিত প্রচার চালাতে হবে। (৯) ধূমপান হ্রাসকরণে বিস্তৃত ও কার্যকর কর্মসূচী চালু করতে হবে, প্রচার বৃদ্ধি ও প্রকাশ্যে ধূমপানরোধক আইন আরো কঠোর ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। (১০) রাষ্ট্র পরিচালনা ও রাজনীতিতে পরিবেশ চেতনার অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। বায়ু দূষণ রোধে জাতীয় পরিকল্পনা চাই।