ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫-এ তামাকজাত দ্রব্যের সংজ্ঞায় বিড়ি-সিগারেট, সিগার, হুক্কা, জর্দা, গুল, খৈনী, সাদাপাতাসহ সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্যকে অন্তর্ভূক্ত করা প্রয়োজন। তবেই আইনের শিরোনামের সঙ্গে সংজ্ঞার ব্যাখ্যা পরিপূর্ণ হবে। ১৬ মে, সকাল ১০টায় ধানমন্ডির স্কাই শেফ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বিষয়ক ন্যাশনাল লিডারশিপ কর্মশালায় বক্তারা উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
এতে বলা হয়, দেশে বিভিন্ন প্রয়োজনে অনেক আইন প্রণয়ন করতে হয়, সকল আইন বাস্তবায়নের জন্য কর্তত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছে। সকল কর্তত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। তবে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সহজ হবে।
সরকার জনস্বার্থে ও জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহণকে ধূমপানমুক্ত করেছে যা বিদ্যমান আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কিন্তু এক্ষেত্রে আইন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সহজ নয়। এজন্য পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহণ ধূমপানমুক্ত না হলে সংশ্লিষ্ট পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনের মালিক/তত্বাবধায়ক, ব্যবস্থাপক/চালককে নগদ আর্থিক জরিমানাসহ শাস্তির বিধান রাখতে হবে। পাশাপাশি পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহণ হিসাবে গণ্য স্থানে যেন বিড়ি-সিগারেটসহ তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করতে হবে। তবেই পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহন ধূমপানমুক্ত ধারা বাস্তবায়ন সহজ হবে।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী সকল প্রকার বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হলেও তামাক কোম্পানিগুলো তা অব্যাহত রেখেছে। এজন্য বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধের ধারাটি বাস্তবায়ন করতে হলে তামাক কোম্পানির জন্য ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা ও ১ বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রাখা দরকার। একই কোম্পানি কর্তৃক এ অপরাধ দ্বিতীয়বার হলে শাস্তির পরিমাণ দ্বিগুণ এবং একাধিকবার হলে কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করার বিধান সংযুক্ত করতে হবে।
এছাড়া বিড়ি-সিগারেটসহ তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটে ৫০ভাগ স্থান জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদানের ব্যবস্থা, তামাক চাষীদের বিকল্প ফলস উৎপাদনে ঋণ সহায়তাসহ অন্যান্য সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, তামাকজাত দ্রব্যের উপর প্রতিবছর উচ্চহারে কর আরোপ করার লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন এবং প্রতি তিনবছর পরপর নীতিমালা পর্যালোচনা ও উন্নয়ন, সাধারণ মানুষকে তামাক কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন উন্নয়ন করতে হবে।
কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর নির্বাহী পরিচালক ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এসএম মাহবুবুর রহমান, মানবিক সভাপতি রফিকুল ইসলাম মিলন। কর্মশালা পরিচালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দ মাহবুবুল আলম এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন উন্নয়ন বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার আমিনুল ইসলাম সুজন।
কর্মশালায় স্কোপ এর নির্বাহী পরিচালক কাজী এনায়েত হোসেন, র্যাক এর নির্বাহী পরিচালক এটিএম শহিদুল ইসলাম, একলাব এর নির্বাহী পরিচালক তারিকুল ইসলাম, এইড এর নির্বাহী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বকুল, ওআরডি’র নির্বাহী পরিচালক মাজেদুল হক মানিক, বিসিডিপি’র নির্বাহী পরিচালক আলতাব হোসেন, সাফ এর নির্বাহী পরিচালক আবদুর রাজ্জাক, পাউপ এর নির্বাহী পরিচারক নুর হোসেন হিরু, রানী’র প্রধান নির্বাহী ফজলুল হক খান, বউকস এর নির্বাহী পরিচালক হাসিনুর রহমান প্রমুখ বিভিন্ন দলের নের্তৃত্ব দেন। এছাড়া ইপসা, বিআইসিডি, প্রত্যাশা, যাকাত মিশন, ম্যাক বাংলাদেশ, শার্প, হেলপ, এসআরডিএ, আলো ফাউন্ডেশন, সারডা, উপমা সমাজ কল্যাণ সংস্থা, নওজোয়ান, মানবিক, ওয়েপ, সোসিও ইকোনোমিক রিসোর্স সেন্টার, স্বভূমি, উপকূল সমাজ কল্যাণ সংস্থা, সংশপ্তক, নলছিটি মডেল সোসাইটি, রিসডা, দুস্থ মানবতার সেবা সংস্থা, ভিডিও, এইচডিও, এফএমএইচ এর কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালায় সারাদেশ থেকে আগত ৪০টি সংগঠনের কর্মকর্তারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন উন্নয়নের সুপারিশমালা পর্যালোচনা করেন এবং যুক্তি তুলে ধরেন।