
কর্মস্থল, রেস্টুরেন্টসহ পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহন শতভাগ ধূমপানমুক্ত না হওয়ায় নারী-শিশুসহ অধূমপায়ীরা পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ বিড়ি-সিগারেটের ধোঁয়ায় চার হাজারের বেশি ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ রয়েছে। পরোক্ষ ধূমপানের কারণে ক্যান্সার, যক্ষা, হাঁপানি, হৃদরোগসহ বিভিন্ন কঠিন রোগের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের মৃত সন্তান প্রসব, অকাল গর্ভপাত, বিকলাঙ্গ বা কম ওজনের শিশুর জন্ম ইত্যাদি মারাত্মক ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া নারী ও শিশুর স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ হলেও রেষ্টুরেন্ট, কর্মস্থল এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো এখনো ধূমপানমুক্ত স্থানের আওতায় আনা হয়নি। শতভাগ ধূমপানমুক্ত স্থান না করা হলে পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি হতে জনসাধারণকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। নারী-শিশুসহ অধূমপায়ীদের পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি হতে রক্ষায় কর্মস্থল, রেস্টুরেন্ট, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহন শতভাগ ধূমপানমুক্ত করা জরুরি।
০৩ জুন ২০০৯ বেলা ১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন উন্নয়নের দাবিতে জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী (নাটাব) ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত এক মানববন্ধন কর্মসূচীতে বক্তারা উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। এতে বক্তব্য রাখেন বিসিসিপি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান, প্রত্যাশা’র সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ, নাটাব এর কর্মসূচী সমন্বয়কারী সাগুফতা সুলতানা, নিরাপদ এর চেযারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ মাহবুবুল আলম, একলাব এর পরিচালক শামসুল আলম, আইএসিআইবি’র কর্মকর্তা নিপেন চন্দ্র বালা, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার আমিনুল ইসলাম সুজন প্রমুখ। কর্মসূচীতে এইড, ক্যাব, ইপসা, মানবিকসহ বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সঙ্গে সম্পৃক্ত সংগঠনগুলো অংশ গ্রহণ করে।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে নিরক্ষরতার হার বেশি ও স্বাস্থ্য সচেতনতাসহ ধূমপান ও তামাকের ক্ষতিকর বিষয়ে সচেতনতা কম। তাই সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্যেকে মোড়কের আওতায় আনা এবং সব মোড়ক/প্যাকেটে ছবিসহ সতর্কবাণী প্রদান করা দরকার। বাংলাদেশর জনসংখ্যার একটি বড় অংশ সাদাপাতা, গুল, জর্দা সেবন করছে। কিন্তু এসব ক্ষতিকর তামাক আইন ও করের আওতায় আসেনি। ফলে দেশে তামাকজনিত মৃত্যু ক্রমশ বেড়ে চলেছে। তাই সব তামাককে কর ও আইনের আওতায় আনতে হবে।
বক্তারা পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপানের স্থান সংক্রান্ত বিধান বাতিল করা; প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ, তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ৫০% শতাংশ জুড়ে ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবানী প্রদান; সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে তামাক কোম্পানির নামে লগো ব্যবহার করে প্রমোশনার কার্যক্রম নিষিদ্ধ; তামাকজাত দ্রব্যের মোড়ক বা কৌটার অনুরূপ বা সাদৃশ্যে অন্য কোন প্রকার দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যে কোন নাগরিককে মামলা করার অধিকার প্রদান; আইনভঙ্গের প্রেক্ষিতে তামাক কোম্পানিগুলোর জরিমানা ও শাস্তির পরিমাণ বৃদ্ধি; তামাকের বিকল্প চাষ ও কর বৃদ্ধির জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, তামাক কোম্পানিগুলো হতে স্বাস্থ্যকর নামে কর আদায়, কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিধি বৃদ্ধি এবং ধূমপানমুক্ত স্থান তৈরির করতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়গুলো আইনে যুক্ত করার সুপারিশ করেন।