মহানগরী ঢাকার অধিকাংশ মানুষ কর্মস্থলে অর্থাৎ অফিস আদালতে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এবং শিশু ও ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময় অবস্থান করছে। এসমস্ত প্রতিষ্ঠানের প্রায় অধিকাংশগুলোতেই যে টয়লেট রয়েছে তা ব্যবহার অনুপযোগী ও অপর্যাপ্ত। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতির উপর। তাই অবিলম্বে জনসমাগমস্থল ও প্রতিষ্ঠানে পর্যাপ্ত এবং মানসম্মত টয়লেট স্থাপনসহ টয়লেট ব্যবহারে নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ১৯ নভেম্বর ২০১৩, মঙ্গলবার, সকাল ১১ টায় পবা কার্যালয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে বিশ্ব টয়লেট দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভা থেকে উক্ত দাবী জানানো হয়।
আলোচনা সভা থেকে জানানো হয়, অধিকাংশ স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসায় অধিক সংখ্যক ছাত্র/ছাত্রীর জন্য অল্প কিছু সংখ্যক টয়লেটের ব্যবস্থা থাকে, যা ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যার তুলনায় অত্যন্ত নগন্য। তাছাড়া প্রধান সড়কের পাশে, লঞ্চ-রেল-বাস টার্মিনাল, হাসপাতাল ইত্যাদি জনসমাগমপূর্ন জায়গা, সভাস্থল, পাবলিক হল, খেলার মাঠ, বাজার, সিনেমা হল, ঐতিহ্যবাহী স্থানেও পর্যাপ্ত টয়লেটের অভাবে ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা না থাকায় অধিকাংশ মানুষ রাস্তার আশেপাশে যত্রতত্র মলমুত্র ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে। বিশেষ করে মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় কম টয়লেট থাকায় এবং অপরিচ্ছন্নতার কারণে মেয়েরা টয়লেট ব্যবহার করছে না এবং ঘরের বাইরে অবস্থাকালীন সময়ে টয়লেট ব্যবহার করতে হবে ভেবে মেয়েরা কম পরিমাণে পানি পান করছে এবং দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকিয়ে রাখছে। দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে বা ধরে রাখলে মূত্র থলিতে ব্যথা ও কষ্ট অনুভূত হতে পারে এবং ঘন ঘন “প্রদাহ” (ইনফেকশন) হতে পারে। পুরুষের তুলনায় মহিলাদের মূত্র নালী/থলিতে, কিডনীতে প্রদাহ ও ‘এনাল ফিশার’ এর প্রকোপ বেশি। অল্প বয়স থেকেই পানি কম পান করার কারণে মেয়েরা বড় হয়েও পেটের নানান রোগে ভুগছে।
পবার সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধের আলোকে প্রারম্ভিক বক্তব্য উপস্থাপন করেন- পবার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান। আলোচনায় অংশ নেন পবার যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মনোয়ার হোসেন, ডাব্লিউবিবির নির্বাহী পরিচালক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ রহমান, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত, পীসের মহাসচিব ইফমা হুসাইন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পবার কো-অর্ডিনেটর আতিক মোরশেদ।
সর্বোপরি পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব রোধে পাবলিক টয়লেট বিষয়ে আলোচনা সভা থেকে নিন্মোক্ত দাবী জানানো হয়-
পাবলিক টয়লেট বিষয়ক সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা, প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, ঐতিহ্যবাহী স্থান, বাস-রেল-লঞ্চ টার্মিনাল, হাসপাতাল খেলার মাঠ, সিনেমা হল, পাবলিক হল, সভাস্থল, গোরস্থান, অস্থায়ী বাজার ইত্যাদি স্থানে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা করা, রেল, নৌ ও অন্যান্য পরিবহনের পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা উন্নত করা, সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে গণসচেতনতা বৃদ্ধিকল্পে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে পাবলিক টয়লেট ব্যবহার বিষয়ে প্রচারণা বৃদ্ধি ও প্রতিটি জেলা শহরের জনসংখ্যা অনুপাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাবলিক টয়লেট উপযুক্ত স্থানে স্থাপন করা, প্রতিটি টয়লেটে পানি, সাবান, তোয়ালে, টয়লেট পেপার ইত্যাদির পর্যাপ্ত পরিমান নিশ্চিত করা এবং ষ্টেডিয়াম, ইজতেমা ময়দানসহ অন্যান্য অস্থায়ী স্থানে যেখানে জনসমাগম বেশী সেখানে “মোবাইল টয়লেট” এর ব্যবস্থা করা, পাবলিক টয়লেট নোংরা, অপরিচ্ছন্ন এবং অন্যান্য সুবিধা না থাকার প্রেক্ষিতে ইজারা বাতিল বা শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহন করা হোক।