English | Bangla
অসংক্রামক রোগ বিষয়ক বিভাগীয় কর্মশালা

ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট রাজশাহী বিভাগীয় সংগঠন বিআইসিডি, বউকস, রানী এবং বিসিডিপি-র যৌথভাবে রাজশাহীস্থ এনজিও ফোরামের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ১৯ জুলাই ২০১২ তারিখে অনুষ্ঠিত এই কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন নীতিবিশ্লেষক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, বিআইসিডি’র নির্বাহী পরিচালক নাজমুদ হুদা নয়ন, বিসিডিপি’র নির্বাহী পরিচালক মো. আলতাব হোসেন, রানী’র প্রধান নির্বাহী মো. ফজলুল হক খান। এতে সভাপতিত্ব করেন বউকস এর নির্বাহী পরিচালক মো. হাসিনুর রহমান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর উন্নয়ন কর্মকর্তা শারমিন আক্তার রিনি।

অভিভাবকদের অসচেতনতা এবং বিজ্ঞাপনের ফলে শিশুকিশোরদের মধ্যে ÿতিকর কোমলপানীয়, এনার্জি ড্রিংক্স, জাঙ্কফুড, ফাস্টফুড সেবনের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড ও এনার্জি ড্রিংক্স, কোমল পানীয় সেবনের কারণে শিশুসহ সব বয়সীদের টাইপ-২ ডায়বেটিস, উচ্চরক্তচাপ, মুটিয়ে যাওয়াসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা বেড়ে চলেছে। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে ফাস্টফুড, জাঙ্কফুড ও কোমল পানীয়ের ব্যবহার হ্রাসে বিজ্ঞাপন বন্ধ এবং এ সকল পণ্যের উপর উচ্চ কর আরোপ জরুরি।

এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, অতীতে বাসায় কোন মেহমান আসলে দেশী ফল ও বাসায় বানানো লেবুর শরবত দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। কিন্তু কোমল পানীয়, প্যাকেটজাত জুস বা খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করা হচ্ছে। মানুষের আচরণের এ পরিবর্তন অসংক্রামক রোগ বেড়ে যাবার অন্যতম কারণ। মো. হাসিনুর রহমান বলেন, শিশুরা গৃহবন্দী হয়ে টেলিভিশনের উপর আশ্রয় নিচ্ছে। আর টিভিতে প্যাকেট জুস, কোমল পানীয়, ফাস্ট ফুড, এনার্জি ড্রিংক্স এর মত ÿতিকর খাদ্যের বিজ্ঞাপন দেখায়। এতে এসব খাবারের প্রতি শিশুদের আকর্ষণ বাড়ছে। তাই অসংক্রামক রোগের জন্য দায়ী সব ÿতিকর খাদ্যের বিজ্ঞাপন গনমাধ্যমে নিষিদ্ধ করতে হবে।

মো. ফজলুল হক খান বলেন, শহরের শিশুদের খেলার মাঠসহ বিনোদনের সুযোগ কমে যাচ্ছে। যে কারণে শিশু-কিশোরদের মধ্যে হতাশা দেখা দিচ্ছে। এ হতাশা এক সময় কিশোর বা তরুণ বয়সে নেশার দিকে ধাবিত করছে। তাই শিশুদের খেলাধুলার সুযোগ গড়ে তুলতে হবে।  আলতাব হোসেন বলেন, তামাক সেবনের মাধ্যমে নেশার শুরু। তামাকের নেশা ক্যান্সারসহ নানা অসংক্রামক রোগের জন্য দায়ী। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নাজমুল হুদা নয়ন বলেন, রাজশাহীতে খেলার মাঠ, পার্ক পর্যাপ্ত নয়। শিশুসহ সব বয়সীদের খেলাধূলার সুযোগ সৃষ্টি করতে খেলার মাঠ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি ফুটপাতগুলো চওড়া করতে হবে। যাতে মানুষ শহরের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে হেটে যেতে পারে। মানুষ হাঁটার সুযোগ পেলে অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি কমে আসবে।
কর্মশালার দ্বিতীয় পর্বে দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপতি হয়। অসংক্রামক রোগের কারণ ও প্রতিকার নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর প্রকল্প সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম সুজন এবং সুস্থ্যতার জন্য হাঁটা-সাইকেল এবং মাঠ-পার্ক এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন সংস্থার ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ রহমান।
প্রবন্ধে আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, মানুষের নেতিবাচক খাদ্যভাস (ক্ষতিকর ফাস্ট ফুড, কোমল পানীয়, এনার্জি ড্রিংক্স, প্যাকেটজাত জুস, চিপস জাতীয় জাঙ্ক ফুড ইত্যাদি) এবং ক্ষতিকর নেশা  (ধূমপান, তামাক ও মাদক সেবন) এবং খেলাধুলার সুযোগ কমে যাওয়ায় শিশুসহ সব বয়সীদের মধ্যে ক্যান্সার, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়বেটিসহ অসংক্রামক রোগ বাড়ছে। তাই অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে এসব নেতিবাচক খাদ্যাভ্যাস ও ক্ষতিকর নেশা দূর করতে নীতি ও আইন প্রণয়ণ করতে হবে।  

প্রবন্ধে মারুফ রহমান বলেন, মানুষের সুস্থ্য থাকার জন্য প্রতিদিন নূন্যতম ৩০ মিনিট হাঁটা প্রয়োজন। হাঁটা মানুষের স্বাস্থ্যের প্রতি উপযোগির পাশাপাশি যাতায়াতের একটি গুরুত্ব মাধ্যম। কিন্তু শহরগুলোতে মানুষের হাঁটার জন্য নেই কোন সুস্থ্য ফুটপাত। স্বাস্থ্য রক্ষা, যাতায়াতের মাধ্যমে কোন ভাবেই নগর পরিকল্পনায় হাঁটার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে না।  মানুষকে হাঁটাতে উৎসাহী করতে পরিকল্পিত ফুটপাত নিশ্চিত করা স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব। দিনব্যাপী এ কর্মশালায় রাজশাহী বিভাগের সব জেলা থেকে ৩০টি বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বিকালে সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদপত্র প্রদান করা হয়।