যানজট ঢাকার যাতায়াত ব্যবস্থায় অন্যতম প্রধান সমস্যা। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে প্রাইভেট কারের ব্যবহার যানজট বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। উন্নতমানের গণপরিবহন ব্যবস্থা না থাকা এবং প্রাইভেট কার ক্রয় ও ব্যবহারে সুবিধা প্রদান করায় মানুষ প্রাইভেট কার ব্যবহারে উৎসাহী হচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে যানজট। তাই ঢাকার যানজট ও যাতায়াত সমস্যা দূর করতে অবিলম্বে মানসম্মত গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু ও প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। ২২ সেপ্টেম্বর বিশ্ব কারমুক্ত দিবস। এ উপলক্ষে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১, সকাল ১১ টায় ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর উদ্যোগে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট মিলনায়তন “যানজট হ্রাসে প্রাইবেট কার নিয়ন্ত্রণ কেন জরুরী " শীর্ষক অলোচনা সভায় বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
যানজট হ্রাসে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণের দাবি শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক (প্রোগ্রাম এন্ড প্লানিং) সৈয়দ মাহবুবুল আলম, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন এর নির্বাহী সদস্য মহিদুল হক খান। ঢাকা শহরের যানজটের চিত্র, নগর পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক সম্মলিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসী অফিসার মারুফ রহমান। সভা সঞ্চালনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার নাজনীন কবীর।
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, জ্বালানী সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সর্বপ্রথম ১৯৭৩ সালে বিশ্ব কারমুক্ত দিবস পালিত হয়। এ বছর চার হাজারের উপর বিভিন্ন শহরে দিবসটি একযোগে পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশেও ২০০৬ সাল থেকে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টসহ পরিবেশবাদী সংগঠনসমূহ দিবসটি পালন করে আসছে। আশা করা যায় আমাদের দেশে অতি শীঘ্রই প্রাইভেট নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দূষণ ও যানজটমুক্ত এবং জ্বালানী সাশ্রয়ী পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
মারুফ রহমান বলেন, যানজটের প্রধান কারণ প্রাইভেটকারের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। কারণ ২টি প্রাইভেট কার একটি বাসের সমান জায়গা নেয় এবং প্রায়শই দেখা যায় একটি প্রাইভেট গাড়িতে একজন যাত্রী চলাচল করে বা ফাকা থাকে অথচ একটি বাসে একটি ট্রিপে রুটের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় ২০০ যাত্রী বহন করে। প্রাইভেট কার শুধুমাত্র চলাচলের জন্যই বেশি জায়গা নেয় না বরং পার্কিং এর জন্য ১৬০ বর্গফুট জায়গা নেয় এবং ৯০ ভাগ সময় পার্কিং অবস্থায় থাকে। এজন্য প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের পরামর্শ দেন।
আবু নাসের খান বলেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রাইভেট কারে মাত্র ৩.৮ শতাংশ চলাচল হয় কিন্তু সড়ক পথের প্রায় ৭০ভাগ স্থান দখল করে রাখছে। অথচ বাস, রিকশা, সাইকেল ও হেঁটে ৯৬.২ শতাংশ যাতায়াত হলেও মাত্র ৩০ভাগ সড়ক ব্যবহারের সুবিধা পাচ্ছে। যা যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভারসাম্য নষ্ট করছে।
মহিদুল হক খান বলেন, সারা বিশ্বে যখন প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে সেখানে আমরা চলছি উল্টো পথে। নগর পরিকল্পনা মানুষের জন্য হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে মানুষকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে না। আমরা আমরা সকলেই বুঝতে পারছি প্রাইভেট কার আমাদের যানজট সৃষ্টিতে অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও আমরা এ বিষয়ে দৃঢ় কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছি না।
ইবনুল সাঈদ রানা বলেন, প্রাইভেট কারের কারণে আমরা একটা বিষয় উপলব্ধি করতে পেরেছি তা হলো যানজট। আমাদের শহরে ২ লক্ষ নিবন্ধিত গাড়ি চলাচল করে। আমাদের চলাচলকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে হলে অবশ্যই প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি যানজট নিরসনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হাতে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণে সোচ্চার হওয়ার আহবান করেন।
আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিসিএইচআরডি এর এস এমতাজ, পিএসএস এর আনোয়ার হোসেন, ইকো সোসাইটি এর শেখ আরিফ আহমেদ, অরুণদ্বয়ের তরুন দল এর শহিদুল ইসলাম বাবু, আইএফপি এর সোহানুর রহমান, বাউকস এর হাসিনুল রহমান।