English | Bangla
তামাক কোম্পানির প্রতারণা থেকে জনস্বাস্থ্যকে রক্ষা প্রতিরোধ করার আহবান

তামাক মানুষের মৃত্যুর জন্য সরাসরি দায়ী। তাই সরকার জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও তামাকজনিত মৃত্যু কমাতে তামাক নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো তামাকের নেশায় মানুষকে ধাবিত করতে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নানাভাবে বিভ্রান্ত করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্থ করছে। মৃত্যুর ফেরিওয়ালা তামাক কোম্পানির প্রতারণামূলক সব কর্মসূচি প্রতিরোধ এবং তামাক কোম্পারি প্রতারণার কবল থেকে জনস্বাস্থ্যকে রক্ষ করার জন্য সরকার-গণমাধ্যম ও বেসরকারি সংস্থার প্রতি আহবান জানানো হয়।

৭ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ  এর সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত কর্মশালার উদ্বোধনীতে বক্তারা উপরোক্ত দাবি জানান। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ-এর সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন এগেইনস্ট এন্ড টিবি এন্ড লাং ডিজিজ (দি ইউনিয়ন) এর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জনস্বাস্থ্য পরামর্শক ইশরাত চৌধুরী, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) এর কর্মসূচি ব্যবস্থাপক আমিন উল আহসান, একশান ইন ডেভেলপমেন্ট (এইড) এর নির্বাহী পরিচালক আমিনুল ইসলাম বকুল এবং ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম। সংস্থার এর ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার সৈয়দা অনন্যা রহমান উদ্বোধনী সেশনসহ কর্মশালা পরিচালনা করেন।  

সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, জনস্বাস্থ্য রক্ষার বিষয়টি তামাক কোম্পানিগুলোর প্রভাবমুক্ত রাখা সম্ভব হলে মানুষের মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব রোধ, তামাকের ক্ষতিকর বিষয়ে প্রচারণা ও তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, তামাকজনিত ব্যয় হ্রাস, তামাক কোম্পানির অপপ্রচার রোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনী দলিল। তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে তামাক কোম্পানির প্রভাবমুক্ত রাখতে এফসিটিসির আর্টিকেল ৫.৩ অনুসরণ করা উচিত। আমিন উল আহসান বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো মৃত্যুকে ফেরি করছে। সরকার ও তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীরা জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে কাজ করছে। আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) অনুযায়ী সরকার বা সরকারী কোন কর্মকর্তা ও তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত কোন সংস্থা/ব্যক্তির তামাক কোম্পানির কার্যক্রমে অংশগ্রহণ, সমর্থন বা সহযোগিতা করার সুযোগ নাই।

ইশরাত চৌধুরী বলেন, এফসিটিসির আর্টিকেলগুলো সম্পর্কে সরকারি কর্মকর্তা ও বেসরকারি সংগঠনগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি করা দরকার। কেউ যেন তামাক কোম্পানির দ্বারা প্রভাবিত না হয় সেদিকে সবার সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। আমিনুল ইসলাম বকুল বলেন, তামাক কোম্পানগুলো নানাভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘণ এবং সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করছে। সেজন্য তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘণ করে প্রতারণামূলক প্রচারণা বন্ধে তামাক কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণসহ জনস্বাস্থ্য উন্নয়নকে তামাক কোম্পানর প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য আর্টিকেল ৫.৩ হচ্ছে রক্ষাকচব। সরকারের সঙ্গে তামাক কোম্পানির কি রকম সম্পর্ক হবে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়েছে এফসিটিসির আর্টিকেল ৫.৩-এ। যেহেতু এ চুক্তি বাংলাদেশের জন্য বাধ্যতামূলক, তাই সরকারের সংশ্লিষ্টদের এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩ এর নীতি অনুসরণ করতে হবে।

কর্মশালায় এফসিটিসি ও আর্টিকেল ৫.৩ বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) এর কর্মসূচি ব্যবস্থাপক আমিন উল আহসান। বাংলাদেশে তামাক কোম্পানির প্রভাব ও আইন লঙ্ঘনের চিত্র বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর কর্মসূচি সমন্বয়কারী আমিনুল ইসলাম সুজন।  

আমিন উল আহসান তার প্রবন্ধে বলেন, এফসিটিসি হচ্ছে তামাকজনিত রোগে মানুষের মৃত্যু রোধ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণে একটি পবিত্র দলিল। ২০০৩ সালে চুড়ান্ত হওয়া ৫৬তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে এফসিটিসিতে বাংলাদেশ প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ এবং ২০০৪ সালে এটি র‌্যাটিফাই করেছে। ১৮৪ টি দেশ (ইউরোপিয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি সংস্থাও রয়েছে) বর্তমানে এর পক্ষভুক্ত। এফসিটিসি ও এর নীতিমালা অনুসরণ করা বাংলাদেশের জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্য।

আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, আমরা যদি তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের অসুস্থ্যতা ও মৃত্যুসহ জনস্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য ব্যয়, পরিবেশজনিত ক্ষতির বিষয় বিবেচনায় নেই তবে কোন আলোচনা কিংবা নীতি প্রণয়নে তামাক কোম্পানির অংশ নেয়ার সুযোগ রাখা যাবে না। তামাক কোম্পানিগুলো তামাক নিয়ন্ত্রণকে বাধাগ্রস্থ করার জন্য মিথ্যাচার করছে, অপপ্রচার চালাচ্ছে। তামাক কোম্পানির মিথ্যাচার সম্পর্কে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।
বিকাল সাড়ে ৪টায় অনুষ্ঠিত সমাপনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর পরিচালক (প্রশাসন) গাউস পিয়ারী। বক্তব্য রাখেন ঘাস ফুল নদী’র সভাপতি আশরাফুল আলম কাজল। এ সময় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে সনদপত্র বিতরণ করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ। এফসিটিসি’র আর্টিকেল ৫.৩ বিষয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত আয়োজিত এ কর্মশালায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের সঙ্গে সম্পৃক্তসহ তামাক নিয়ন্ত্রণে কর্মরত ৪০টি সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।