মাহে রমজানে ধূমপায়ীদের ধূমপান ত্যাগ এবং সরকারকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধনের আহবান জানিয়েছে তামাক বিরোধী কর্মীরা। ধূমপান ফ্যাশান বা অনুরোধে শুরু করলেও, পরিসমাপ্তি রোগ ও মৃত্যুতে। তাই এ মরণঘাতী পণ্য নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তি উদ্যোগ এর পাশাপাশি সরকারের আইন সংশোধনের পদক্ষেপ জরুরি। আজ সকাল ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউটের সামনে তামাক বিরোধী সংগঠনের আয়োজিত এক অবস্থান কর্মসূচীতে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এবং প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের উদ্যোগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট তামাক নিয়ন্ত্রণকর্মী হেলাল আহমেদ‘র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখে নীতিবিশ্লেষক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ইসি বাংলাদেশের আরিফুর রহমান, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটি আমির হোসেন, সিরাক বাংলাদেশের এস এম সৈকত প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, দেশে একের পর এক ক্যান্সার হাসপাতাল বানানোর পরিকল্পনা অপেক্ষা, ক্যান্সারের সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ তামাক ব্যবহার কমাতে সরকারকে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। ক্যান্সার হাসপাতালে মানুষের চিকিৎসা সম্ভব, কিন্তু মানুষকে রোগ হতে মুক্ত রাখতে তামাক নিয়ন্ত্রণের কোন বিকল্প নেই।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে নারীরা ধূমপান না করলেও, প্রায় ১ কোটি নারী পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের কারণে নানা কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ নারীদের রক্ষায় পাবলিক প্লেস ও পরিবহনগুলো শতভাগ ধূমপানমুক্ত করা প্রয়োজন। আইন সংশোধনে শতভাগ ধূমপানমুক্ত স্থানের সুপারিশ করা হলেও, তামাক কোম্পানিগুলো এ বিষয়ে বিরোধীতা করছে বলে গণমাধ্যমে তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। কোম্পানিগুলো এ ধারা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বলে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছে। মাহে রামজানের ১ মাস এ দেশের কোন পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে শুধু ধূমপান নয়, সকল ধরনের খাদ্য দ্রব্য প্রকাশ্যে গ্রহণ বন্ধ থাকে। যা একটি সুন্দর ও অনুকরণীয় বিষয়। সুতরাং আমাদের দেশে শতভাগ ধূমপানমুক্ত স্থান সৃষ্টি হলে জনগন বিষয়টি আনন্দের সাথে গ্রহণ করবে।
বক্তারা বলেন, তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কগুলো জনগণকে তামাক ব্যবহার করতে আকৃষ্ট করে। তাই কোম্পানির মোড়কগুলোতে তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ছবি প্রদান করতে হবে। ফলে তামাকজাত দ্রব্যের ক্রেতা প্রতিনিয়ত তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন হবে।
বক্তারা বলেন, মাদকদ্রব্য বন্ধে সরকার একের পর এক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। ব্যয় হচ্ছে শতকোটি টাকা, শ্রম ও জনসম্পদ। কিন্তু তারপরও বাড়ছে মাদকের ব্যবহার। তামাকজাতদ্রব্যের মতো মাদক ব্যবহারের প্রবেশ দ্বারা বা উপকরণকে নিয়ন্ত্রণ না করলে, মাদক ব্যবহার হ্রাস করা সম্ভব হবে না।
বক্তারা বলেন, ধূমপান আমাদের কাছ থেকে অনেক প্রিয়জনকে কেরে নিচ্ছে। কথা সাহিত্যিক হুমায়ন আহমেদ, হুমায়ন ফরিদী, শিল্পি আজম খান, জর্জ হ্যারিসনসহ দেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের সুহৃদ ব্যক্তিবর্গকে আমরা অকালে হারিয়েছি ধুমপানের কারণে। দেশের লক্ষ লক্ষ সম্ভাবনাময় তরুণ আজ ধুমপানে আসক্ত। দিন দিন বাড়ছে দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা, বাড়ছে রোগ ও মৃত্যু। এ রোগ ও মৃত্যূর মিছিল রোধে প্রয়োজন তামাক নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ। যা আইনের সংশোধন ও কর বৃদ্ধির মাধ্যমে করা সম্ভব।
কর্মসূচীতে বিআরসিডি, পিএসএস, শ্রমজীবি আন্দোল, নাটাব, স্যাক, বিআইসিডি, ইয়ুথইর্য়ার , অরুনোদয়ের তরুন দল, হিতৈষী - বাংলাদেশ, দিগন্তসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন।