
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধন জরুরি, আইনজীবী সমিতি সভায় অভিমত, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণীয় করা হলেও, আইনটির বাস্তবায়ন প্রত্যাশিত মাত্রায় নয়। প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষ ধুমপানের ক্ষতি থেকে জনগনকে রক্ষায় আইনটির সংশোধন জরুরী। ১৬ জুলাই ২০১২ সাড়ে ৩ টায় ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাকক্ষে প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। এ্যাডভোকেট সোহানা তাহমিনার সঞ্চালনায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক এ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী হোসেন, প্রবীন বিশিষ্ট আইনজীবী মোহাম্মদ হানিফ এবং ঢাকা জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য সচিব ও সিভিল সার্জন ডা. জসিম উদ্দিন খাঁন, প্রত্যাশা হেলাল আহমেদ।
বক্তারা বলেন, দেশের বিদ্যমান আইন বাস্তবায়ন ও সংশোধনের ক্ষেত্রে আইনজীবীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিগত বছরে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ এর প্রতিটিতে সমর্থন যুগিয়েছে আইনজীবীরা। বার কাউন্সিল ধূমপানমুক্ত করণ, আইন সংশোধনের বিষয়ে সরকারকে সুপারিশ প্রদান; বার এসোসিয়েশন ধূমপানমুক্ত ঘোষনা; জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সভায় সক্রিয় অংশগ্রহণ; পাবলিক প্লেস ও পরিবহন ধূমপানমুক্ত রাখতে এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন প্রশাসনকে সহায়তা; তামাক চাষ বন্ধে মামলা দায়ের; তামাক নিয়ন্ত্রণে সুপ্রিম কোর্টে রীট মামলাসহ নানা বিষয়ে আইনজীবীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বক্তারা বলেন, তামাক কোম্পানিগুলোর দেশের যুব সমাজকে ধূমপানে উৎসাহী করতে নানা ধরনের প্রচারণা পরিচালনা করেছে। দেশের কিশোর ও তরুণ সমাজকে রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অবিলম্বে সংশোধনের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, শতভাগ ধূমপানমুক্ত স্থান নিশ্চিত এবং প্যাকেটের গায়ে সচিত্র সতর্কবানী প্রদানের বিষয়গুলো নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বক্তারা সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, দেশের অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর। পৃথিবীর উন্নত দেশে কোম্পানী গুলো সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান করলেও বাংলাদেশে করছে না। জনসাধারনকে তামাকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করতে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান করতে হবে।
বক্তারা বলেন একটি দেশের উন্নয়নে খাদ্য নিরাপত্তা একটি জরুরী বিষয়। কিন্ত আমাদের দেশে তামাক চাষ যেভাবে আগ্রাসী রূপ নিয়ে খাদ্য উৎপাদনের জমি দখল করছে এতে সংকট আরো প্রকট হচ্ছে। অদুর ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা সমস্যা হবে। তামাক চাষের কারণে পানি, মাটি, বায়ুসহ পুরো পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবন রক্ষার চেয়ে কোন কিছুই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। তাই মানুষের জীবন বাচাঁতে বিড়ি-সিগারেট, জর্দ্দাগুলসহ সকল কম মূল্যের তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চহারে কর বৃদ্ধি খুবই জরুরী।
বক্তারা বলেন, তামাক কোম্পনিগুলো আইনভঙ্গ করে জনসাধারণকে তামাক ব্যবহারে উদ্ধুদ্ধ করছে। কিন্ত কোম্পানির আইনভঙ্গ বা বিজ্ঞাপন প্রচার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ তেমন জোরালো নয়। তামাক কোম্পানিগুলোর উদ্ধুদ্ধকরণ কার্যক্রমের প্রতি উদাসীনতা, কোন কোন ক্ষেত্রে নীতি প্রণয়নে নমনীয়তার কারণে কোম্পানিগুলো তাদের রোগ ও মৃত্যু সৃষ্টিকারী পণ্যের বাজার সৃষ্টির সুযোগ পাচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে এ ধরনের সুযোগ বন্ধ করতে হবে।