বিদ্যমান আইনের দূর্বলতার সুযোগে কোম্পানিগুলো তামাক ব্যবহারে জনসাধারণকে উদ্ধুদ্ধ করতে নানা প্রচারণা কার্যক্রম চালাচ্ছে। তামাক ব্যবহারজনিত রোগ, মৃত্যু এবং চিকিৎসাখাতে রাজস্ব ব্যয় হ্রাসে সরকারকে নীতি গ্রহণে কঠোর হতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণে নমনীয় নীতি তামাক ব্যবহারকে বৃদ্ধি করবে, যা সরকারের জনস্বাস্থ্য কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করবে। তামাক ব্যবহার হ্রাসে সকল তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চ কর আরোপ এবং আইন সংশোধন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। ১৯ মে ২০১২ তারিখ সকাল ১১ টায় ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট আয়োজিত ‘‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলায় আইন সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা” ’’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আব্দুল হাই, সংসদ সদস্য ঝিনাইদহ-১, ড. মোঃ আকরামূল ইসলাম, সহকারী পরিচালক, স্বাস্থ্য বিভাগ ব্যাক, ইসরাত চৌধূরী, টেকনিক্যাল এডভাইজার, দি ইউনিয়ন, আমিনুল ইসলাম বকুল, নির্বাহী পরিচালক, এইড। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, পরিচালক ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, সঞ্চলনা করেন আমিনুল ইসলাম সুজন, প্রকল্প সমন্বয়কারী, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট।
বক্তারা বলেন এদেশের অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর, এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই যে কোন কার্যক্রম বা পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। তামাকজাত দ্রব্যের যে লিখিত সতর্কবাণী ব্যবহার করা হচ্ছে, তা স্বল্প শিক্ষিত বা নিরক্ষর মানুষের বুঝা কঠিন। এ পর্যন্ত বিশ্বের ৩৯টি দেশে মোড়কের গায়ে ছবিসহ ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরার বিধান রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর হওয়া স্বত্বেও, বাংলাদেশে শুধুমাত্র লিখিত সতর্কবানীর ব্যবস্থা রয়েছে।
বক্তারা বলেন, তামাক কোম্পনিগুলো আইনভঙ্গ করে জনসাধারণকে তামাক ব্যবহারে উদ্ধুদ্ধ করছে। কিন্ত কোম্পানির আইনভঙ্গ বা বিজ্ঞাপন প্রচার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ তেমন জোরালো নয়। তামাক কোম্পানিগুলোর উদ্ধুদ্ধকরণ কার্যক্রমের প্রতি উদাসীনতা, কোন কোন ক্ষেত্রে নীতি প্রণয়নে নমনীয়তার কারণে কোম্পানিগুলো তাদের রোগ ও মৃত্যু সৃষ্টিকারী পণ্যের বাজার সৃষ্টির সুযোগ পাচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে এ ধরনের সুযোগ বন্ধ করতে হবে।
বক্তারা বলেন একটি দেশের উন্নয়নে খাদ্য নিরাপত্তা একটি জরুরী বিষয়। কিন্ত আমাদের দেশে তামাক চাষ যেভাবে আগ্রাসী রূপ নিয়ে খাদ্য উৎপাদনের জমি দখল করছে এতে সংকট আরো প্রকট হচ্ছে। অদুর ভবিষ্যতে খাদ্য নিরাপত্তা বিঘিœত হবে। তামাক চাষের কারণে পানি, মাটি, বায়ুসহ পুরো পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বক্তারা বলেন সামাজিক দায়বদ্ধতা কোম্পানিগুলোর এমন একটি কার্যক্রম যার মাধ্যমে তারা নিজেদের অপকর্মকে আড়াল করে থাকে। এ সকল কার্যক্রমের মাধ্যমে তারা মানুষের সহনুভুতি আদায় করছে। তামাক কোম্পানীগুলো বিভিন্ন কুটকৌশলে নীতি নির্ধারক ও প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদেরও প্রভাবিত করছে। তাই সরকারের কর্মকর্তাদের কোম্পানিগুলোর সাথে কিভাবে কার্যক্রম করবে সে বিষয়ে সুপষ্ট নীতি থাকা প্রয়োজন। এধরনের নীতি তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সরকারের নীতিকে কোম্পানির প্রভাবমুক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। সভায় তামাক কোম্পানিগুলোর ভ্রান্ত প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হয়ে, বরং জনস্বাস্থ্যেকে প্রধান্য দিয়ে সরকারের নীতি গ্রহণ করা, তামাক কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে নমনীয় পরিহার, আসন্ন বাজেটে তামাক কারখানায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির তামাকজাত দ্রব্যের উপর একটি নির্দিষ্ট কর আরোপ এবং অবিলম্বে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের সুপারিশ করা হয়।
এছাড়াও সভায় বক্তব্য রাখেন, ইপসার নাজমূল হায়দার, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আ মু ময়াজ্জেম হোসেন, প্রত্যাশার মাদক বিরোধী সংগঠনের হেলাল আহমেদ, উন্নয়ন ধারার আমিনুল রসুল, সিরাক বাংলাদেশের এস এম সৈকত, র্যাকের নির্বাহী পরিচালক এটিএম শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।