নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে রেলকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। এজন্য সমন্বিত পরিবহন নীতিমালা প্রণয়ন, দেশের সব বন্দর ও শিল্পকারখানার সঙ্গে রেলের সংযোগ সৃষ্টি, রেলওয়ে প্রশিক্ষণ একাডেমী শক্তিশালী করা এবং জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি জরুরি। এক্ষেত্রে রেলকে সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা দিতে হবে। অর্থাৎ রেলের সার্বিক উন্নয়নে সমন্বিত বোর্ড গঠন করা উচিত। গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ বিকাল ৩টায় সিরডাপ মিলনায়তনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় দেশের বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ উক্ত পরামর্শ দেন। সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ রহমান ।
পবা চেয়ারম্যান আবু নাসের খান-এর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক এমপি। আলোচনা করেন বুয়েট এর সাবেক উপাচার্য ও আহসান উল্লাহ্ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম এম শফিউল্লাহ্, পরিকল্পনা কমিশন সচিব ভইয়া শফিকুল আলম, রেল অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রকৌশলী আবু তাহের, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট পরিচালক এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম প্রমুখ। সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর ন্যাশনাল এডভোকেসি অফিসার মারুফ রহমান ও সঞ্চালনা করেন সংস্থার কর্মসূচি ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম সুজন।
মন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, রেল জনগণের সম্পদ। তাই রেলের সম্পদ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। জনগণের নিরাপদ, সাশ্রয়ী যাতায়াত নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী রেলপথ মন্ত্রণালয় করেছেন। এখন আমাদের লক্ষ্য হবে, জনগণের জন্য সেবা দেয়া। সেবার মনোভাব নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেল অধিদপ্তর কাজ করে যাবে।
রেল মন্ত্রী আরও বলেন, রেলপথ মন্ত্রণালয় সবার জন্য উন্মুক্ত। রেল উন্নয়নে যে কোন পরামর্শ আমরা সাদরে গ্রহণ করব। যে কেউ আমাদের পরামর্শ দিতে পারেন। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা আন্তরিকভাবে রেল উন্নয়নে কাজ করে যাব এ আমাদের অঙ্গীকার।
আবু নাসের খান বলেন, পরিবেশের উপর রেলের ইতিবাচক অবদান, দেশের উন্নয়নে এর অবদান হিসাব করে রেল উন্নয়নে আরও মনোযোগী হতে হবে। অধ্যাপক এ এম এম শফিউল্লাহ্ বলেন, ঢাকার সঙ্গে পাশ্ববর্তী জেলাগুলোর যোগাযোগ রেল পথের মাধ্যমে বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে বিকেন্দ্রীকরণ সম্ভব হবে। পাশ্ববর্তী জেলাগুলোর মানুষ উপকৃত হবে। পরিকল্পনা কমিশনের সচিব ভূইয়া শফিকুল ইসলাম বলেন, রেল উন্নয়নে পরিকল্পনা কমিশন থেকে বরাদ্দ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হবে। রেল উন্নয়নে পরিকল্পনা কমিশন ইতিবাচক।
প্রকৌশলী আবু তাহের বলেন, রেলওয়ের উন্নয়নে সরকার খুবই আন্তরিকভাবে কাজ করছে। আমরা নতুন বগি, ইঞ্জিন আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ঢাকা থেকে টঙ্গী হয়ে গাজীপুর পর্যন্ত রেলের ৩য় ও ৪র্থ লাইন আগামী জুন-জুলাই নাগাদ শুরু হবে।
এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, রেলের উন্নয়নে একটি গবেষণা সেল গঠন করা জরুরী। রেলে যাত্রী এবং মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে সমস্যা চিহ্নিতকরণ চাহিদা নিরূপণ করাই যার প্রধান কাজ হবে।
মতবিনিময় সভায় আলোচনা করেন ফোয়ারা আহবায়ক ইকরাম আহমেদ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আনসার, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ) এর সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক (বেন) সংগঠক কামরুল আহসান খান, পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক উপ-মহাপরিচালক ও পবা’র সংগঠক আবদুস সোবহান, পবা’র যুগ্ম সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মনোয়ার হোসেন, রেল শ্রমিক লীগের সভাপতি হুমায়ূন কবীর, রেলওয়ে ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট ( কেনিক) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, বাংলাদেশ রেলওয়ে এমপ্লয়ীজ এসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি একেএম আব্দুল ওয়াদুদ প্রমুখ।
প্রবন্ধে মারুফ রহমান বলেন, নগর জীবনে পরিবহন সঙ্কট দূর করতে রেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য ঢাকা-গাজীপুর পরিকল্পনাধীন ৩য় ও ৪র্থ লেন দ্রুত স্থাপন জরুরি। প্রয়োজন অনুযায়ী রোলিং স্টক বৃদ্ধি করা-যেমন, লোকোমটিভ, যাত্রীবাহী কোচ ও মালবাহী ওয়াগন বৃদ্ধিসহ কর্ডলাইন-ডাবল লাইন ও ডুয়েল গেজ এ মালামাল লোডিং-আনলোডিং এর জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা, আশ-পাশের শহর ও গ্রাম থেকে প্রতিদিন ঢাকায় আসার জন্য আরো কম্পিউটার ট্রেন চালু করা, টিকিট পেতে হয়রানি বন্ধ করা ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান